ইছামতী থেকে শুরু হল কচুরিপানা তোলার কাজ

পুরসভার উদ্যোগে শুরু হয়েছে বনগাঁ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা তোলার কাজ। এলাকার মানুষের বহু দিনের দাবি ছিল, কচুরিপানা তুলে নদী পরিস্কার করা হোক। অবশেষে সেই কাজ শুরু হওয়ায় নদী পাড়ের বাসিন্দারা খুশি। তবে শুধু মাত্র পুরসভার একার পক্ষে নদী কচুরিপানা মুক্ত করাটা পুরোপুরি সম্ভব কিনা, সেই সংশয়ও দানা বেঁধেছে শহরবাসীর মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

নদে এল জল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পুরসভার উদ্যোগে শুরু হয়েছে বনগাঁ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা তোলার কাজ। এলাকার মানুষের বহু দিনের দাবি ছিল, কচুরিপানা তুলে নদী পরিস্কার করা হোক। অবশেষে সেই কাজ শুরু হওয়ায় নদী পাড়ের বাসিন্দারা খুশি। তবে শুধু মাত্র পুরসভার একার পক্ষে নদী কচুরিপানা মুক্ত করাটা পুরোপুরি সম্ভব কিনা, সেই সংশয়ও দানা বেঁধেছে শহরবাসীর মধ্যে।

Advertisement

সোমবার সকালে স্থানীয় বঙ্কিমস্মৃতি ময়দান এলাকায় বিশ্বনাথ মৈত্র স্মৃতি ঘাট থেকে কাজ শুরু হয়েছে। শ’খানেক শ্রমিক জলে নেমে পড়েন। পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “প্রথম পর্যায়ে সাতভাই কালীতলা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নদীপথে কচুরিপানা তোলা হবে। পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ওই কাজের জন্য অর্থ খরচ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।”

কয়েক বছর ধরেই মহকুমার অন্য অংশের মতোই শহরেও ইছামতী কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে। মশার উপদ্রবও বেড়েছে সে কারণে। শহরের বহু মানুষ নদীতে স্নান করতেন। সে সব বহু দিন হল বন্ধ। মৎস্যজীবীরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। নৌকা করে যাতায়াত বন্ধ। প্রতি বছর সাতভাই কালীতলা এলাকায় গোটা পৌষ মাস জুড়ে মেলা চলে। সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শনিবার হাজার হাজার মানুষ ওই মেলায় পুজো দেন, বনভোজন করেন। বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকা থেকে মানুষ নৌকায় করে কালীতলায় যেতেন। যা ওই প্রাচীন মেলার একটা ঐতিহ্য বলেই মনে করতেন বাসিন্দারা। কিন্তু কচুরিপানার জন্য সে সব ইদানীং বন্ধ। পুর কর্তৃপক্ষ এ বার ফের নৌকায় করে মেলায় যাতায়াতের বিষয়টি ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। কচুরিপানা তোলার কাজ দেখতেও নদী পাড়ের মানুষ ভিড় করছেন। বহু দিন পরে নদীর জল দেখা গেল, এমন কথাই ঘুরছে লোকের মুখে মুখে। কাজের তদারকি করছিলেন পুরসভার সাফাই বিভাগের চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল হিমাদ্রি মণ্ডল। তিনি বললেন, “শনিবার থেকে কচুরিপানা দুর্বল করে দিতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।”

Advertisement

বিষয়টির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোরও আছে। তৃণমূলের বনগাঁ সভাপতি শঙ্কর আঢ্য বলেন, “ইছামতী নদী সংস্কারে কেন্দ্র সম্পূর্ন উদাসীন। একশো দিনের কাজ প্রকল্পেও কচুরিপানা তোলা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। গত লোকসভা ভোটের আগে এখানে বিজেপির এক প্রার্থী পাঞ্জাবি পড়ে নদীতে নেমে কচুরিপানা তোলার নাটক করলেন। তাদের দলই তো এখন কেন্দ্রে ক্ষমতায়। তা হলে তিনি কী করছেন?”

নাম না করলেও শঙ্করবাবুর অভিযোগের তির গত লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাসের দিকেই। কারণ তিনিই প্রচারে বেরিয়ে নদীতে নেমে কচুরিপানা তুলেছিলেন। কেডি বলেন, “পুরসভা কচুরিপানা তুলছে ভাল উদ্যোগ। আমরা স্বাগত জানাই। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বনগাঁয় এসে বলে গিয়েছেন, ইছামতী সংস্কারের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। উনি আরও টাকা চাইলে আমরা দিল্লি থেকে এনে দেব। প্রয়োজনে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসব।”

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নদী থেকে কচুরিপানা তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই কাজে আপাতত সরকারি বরাদ্দ নেই। মুখ্যমন্ত্রী সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে যে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছিলেন, তা কী ভাবে খরচ করা হবে তা নিয়েই জেলা প্রশাসনের কাছে সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা এখনও আসেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement