আধিকারিক না থাকায় ক্ষতিপূরণ পেতে নাজেহাল কুলপির মানুষ

বেশ কয়েক বছর আগে কুলপির কালীতলা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁচিশের বাপি হালদার সাপের কামড়ে মারা যান। তাঁর বাবা উত্তম হালদার এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। প্রতিবন্ধী মহিলা চণ্ডী হালদারের ঘর ভেঙে গিয়েছিল। স্বামী হারা মহিলা এখন তাঁর ছোট ছেলেটিকে নিয়ে পাশের বাড়িতে থাকেন। আবেদন করার পরে এখনও ঘর সারানোর ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি। অন্ধ বিধবা আজমন বেওয়া, আকিরন বিবি, সাহেরুল হালদারদেরও একই অবস্থা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কুলপি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৪২
Share:

ঘরের এই অবস্থা। তবু টাকা মিলছে না দীর্ঘ দিন। কুলপির পূর্ব দেরিয়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বেশ কয়েক বছর আগে কুলপির কালীতলা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁচিশের বাপি হালদার সাপের কামড়ে মারা যান। তাঁর বাবা উত্তম হালদার এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

Advertisement

প্রতিবন্ধী মহিলা চণ্ডী হালদারের ঘর ভেঙে গিয়েছিল। স্বামী হারা মহিলা এখন তাঁর ছোট ছেলেটিকে নিয়ে পাশের বাড়িতে থাকেন। আবেদন করার পরে এখনও ঘর সারানোর ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি। অন্ধ বিধবা আজমন বেওয়া, আকিরন বিবি, সাহেরুল হালদারদেরও একই অবস্থা। নানা কারণে সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা তাঁদের। কিন্তু দিচ্ছে কে? এঁদের কেউ কেউ জানালেন, কয়েক বছর আগে ঝড় বৃষ্টিতে খড়ের চাল উড়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে বছর দু’য়েক ধরে একটা ত্রিপলের জন্য বিডিও অফিসে গিয়ে ধর্না দিলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। কখনও বলা হচ্ছে, অফিসার নেই। কখন বা বলা হচ্ছে পঞ্চায়েতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করতে। কিন্তু কোথাও গিয়েই কোনও লাভ হয়নি। বর্ষা এসে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।

কিন্তু কেন এই অবস্থা?

Advertisement

জানা গেল, কুলপি ব্লকে গত সাড়ে ছ’বছর ধরে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক নেই। যার জেরে দিনের পর দিন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কুলপি ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েতে জনসংখ্যা ৩ লক্ষেরও বেশি। এলাকায় অতি বৃষ্টি বা কম বৃষ্টির ফলে কৃষি জমি, ঘর বাড়ি, মাছের পুকুর নষ্ট হয়ে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের জন্য চাল, ত্রিপল, জামাকাপড় বিলির ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও, বড় কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে কিংবা অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও সরকারি নিয়ম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সাপের ছোবলে মৃত্যু হলে বা বাজ পড়ে মৃত্যু হলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা।

এই ধরনের ঘটনায় সম্পূর্ণ তদন্তের রিপোর্ট তৈরি করার দায়িত্ব বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের। সেই রিপোর্ট যায় মহকুমা প্রশাসনের কাছে। তারপরেই মহকুমা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর এই সমস্ত বিষয় সামলানোর জন্য যে কোন বিডিও অফিসে থাকার কথা একজন করে বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক। কিন্তু কুলপি ব্লকে সেই পদটি দীর্ঘ দিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। একজন সাধারণ কর্মী আছেন বটে। কিন্তু তাঁকে নিজের কাজ নিয়েই হিমশিম খেতে হয়। ফলে তাঁর পক্ষে আর বাড়তি দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না।

কুলপির বিডিও সেবানন্দ পাণ্ডা বলেন, “ওই দফতরের আধিকারিক না থাকায় সব সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোজ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ চালাতে হয়।

এই এলাকায় হরিনারায়ণপুর, মুকুন্দপুর, এমনকী হুগলি নদী-লাগোয়া নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেই ত্রাণের কাজের সব দায়িত্ব আমাকেই সামলাতে হয়। এখানে জরুরি ওই পদে একজন আধিকারিকের। বিষয়টি সকলে জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবার মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “এ নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। এলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement