সেই প্রাচীন নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র।
ছাদ ভেঙে পড়েছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র, শাল-সেগুনের তৈরি দরজা-জানলা, কাঠের কড়ি-বরগা। সন্ধ্যা নামলেই বসছে মদ-জুয়ার আসর। চলছে অসামাজিক কাজকর্মও। সংস্কারের অভাবে এ ভাবেই নষ্ট হতে বসেছে ক্যানিংয়ের ‘পোর্ট ক্যানিং অ্যান্ড ল্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’ কোম্পানির তৈরি ‘খাস মহল ভবন’।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৮৬৬ সালে প্রায় ১০০ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় দশ বিঘার উপর গড়ে ওঠে ওই মহলের দু’টি বাড়ি। আধিকারিকদের বসবাসের জন্য বাংলোও তৈরি হয়। ভবন তৈরির পর থেকেই মূলত স্থানীয় এলাকায় খাজনা আদায়ের জন্য ‘কালেক্টর্স অফিস’ হিসেবে ব্যবহৃত হত মহলটি। স্বাধীনতার পরে ১৯৬২ সালে ওই ভবনে চালু হয় ক্যানিং-২ ব্লক অফিসের কাজকর্ম। তবে কয়েক বছর পরেই অফিস উঠে যায় জীবনতলায়। তার পর থেকে খালিই পড়েছিল ভবনটি। ১৯৯২-৯৩ সালে ক্যানিং মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কার্যালয় হিসেবে ভবনটি ফের ব্যবহার করা শুরু হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে সেই অফিসটিও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আমড়াবেড়িয়ায়। ফের অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে ভবনটি।
তার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল ভবনটি। বাম আমলেও ভবনটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয়নি সরকার। খাসমহল চত্বরের সরকারি জমি জবরদখল করে অনেকেই ক্লাব বা দোকান তৈরি করেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নতুন সরকারের আমলেও সেই ধারা অব্যাহত। শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের মদতে খাসমহলের সরকারি জমিতে বাঁশ, খুঁটি পুঁতে জবরদখল শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ভবনটির সংস্কার করে ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। খাসমহলের জবর দখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি লিজ হিসেবে ভাড়া দিক সরকার। তবে রাজস্বও আদায় করা যাবে।
কৃষক সভার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দুলাল ঘোষ বলেন, “আমি যখন জেলা পরিষদের সদস্য ছিলাম, তখন জবরদখল হয়ে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিছুটা পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। বাকিটা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার পরে ক্ষমতা বদল হয়ে যাওয়ায় তা আর করে ওঠা হয়নি।”
ক্যানিং ১ ব্লকের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, “ওই ভবনটি ক্যানিং-এর ঐতিহ্য। অবিলম্বে খাসমহল ভবনের সংস্কার করে সেটিকে ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’-এর মর্যাদা দেওয়ার জন্য আমরা মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত আবেদনও জানিয়েছি।” ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি পরেশ দাস বলেন, “খাসমহলের কিছু কিছু জায়গা জবর দখল হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কোনও ভাবে জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না। ভবন সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব।”
মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্যও জমি বেদখলের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “জমি পুনরুদ্ধারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবন সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”