এই পাওয়ার প্লান্ট থেকেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছবে বিদ্যুৎ। —নিজস্ব চিত্র।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে এতদিন অন্ধকারে ডুবে থাকা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ ঘোড়ামারায়। এখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। শুরু হয়েছে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ। আনন্দে ফুটছেন গ্রামবাসী।
তিন দিক নদী, এক দিকে বঙ্গোপসাগর ঘেরা এই দ্বীপ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এতদিনেও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। সম্প্রতি সেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আইআইটি খড়গপুর ও সৌরবিজ্ঞানী শান্তিপদ গণচৌধুরীর উদ্যোগে দ্বীপের মিলন বিদ্যাপীঠ স্কুলের মাঠে শুরু হয় প্রায় ২৫০ কিলোওয়াট পাওয়ার প্লান্ট তৈরির কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অনুমোদনেই শুরু হয় প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৮ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পাবে পরিবারগুলি। প্রতিটি পরিবার চারটি করে আলো, একটি পাখা ও একটি টিভি চালাতে পারবে। ইউনিট প্রতি ৪-৫ টাকা করে দিতে হবে তাঁদের। সৌরশক্তির সাহায্যে পানীয় জল তোলার ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া ই-রিকশা চলবে এলাকায়। পঞ্চায়েত অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আলো লাগানো হবে। দ্বীপের রাস্তাঘাট, বাজার এলাকায় পথবাতিও বসবে। বিদ্যালয়গুলিতেও আলো-পাখার ব্যবস্থা করা হবে। ঘোড়ামারা থেকে কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাট পর্যন্ত একটি সৌরশক্তিচালিত বোটও চালু হবে। জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ মিলবে।
কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে ওড়িশা, অসম, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের চারটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। তার মধ্যে ঘোড়ামারার প্রকল্পটিই সবচেয়ে বড়। প্রকল্পের জন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি পাঁচ বছরের জন্য দেখাশোনা করবে আইআইটি খড়গপুর।
বর্তমানে দ্বীপে ১১২৫টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। কিছু পরিবার নিজেদের খরচে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। তবে, সন্ধের পরে দ্বীপের অধিকাংশ এলাকাই অন্ধকারে ডুবে যায়। সেই অন্ধকার কাটিয়ে ঘোড়ামারা আলোয় ফিরতে চলেছে বলে জানান ঘোড়ামারা সৌরপ্রকল্প রূপায়ণ কমিটির চেয়ারম্যান বিজ্ঞানী শান্তিপদ গণচৌধুরী। তিনি বলেন, “বিচ্ছিন্ন, দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত ঘোড়ামারা দ্বীপে প্রচলিত শক্তি নিয়ে যাওয়া প্রযুক্তিগত ভাবে কঠিন। তাই ঘোড়ামারা দ্বীপে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা হয়। আজ তা সফল হতে চলেছে। সবচেয়ে বড় আধুনিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এখানে চালু হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মানস কারক বলেন, “দ্বীপটা অন্ধকারে ডুবে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে প্রত্যেকের বাড়িতে আলো জ্বলে উঠবে। খুবই ভাল লাগছে।” ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, “দ্বীপ আলোকিত হবে। এটা খুশির খবর। ফেরিঘাট, বাজার, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও রাস্তায় আলো থাকবে সবসময়। এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেও কিছু কর্মসংস্থান হবে।”
স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। তাই কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার প্লান্ট বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে বহু পরিবার উপকৃত হবে। স্থানীয় অর্থনীতিরও হাল ফিরবে।’’