বাণে বিপর্যস্ত ঘাট

নদীর পাড়ে কংক্রিটের ছাউনি। টিকিট ঘর হাট করে খোলা। সিঁড়ির দু’ধাপ নামার পরে গঙ্গায় হারিয়ে গিয়েছে বাঁধানো ঘাট। পাশে রেলিংবিহীন বাঁশের সাঁকোটাও ফুট তিরিশেকের পরে গঙ্গায় ঝুলছে।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:১৫
Share:

জলে-গেল: তলিয়ে গিয়েছে কাঠের সাঁকো। নিজস্ব চিত্র

নদীর পাড়ে কংক্রিটের ছাউনি। টিকিট ঘর হাট করে খোলা। সিঁড়ির দু’ধাপ নামার পরে গঙ্গায় হারিয়ে গিয়েছে বাঁধানো ঘাট। পাশে রেলিংবিহীন বাঁশের সাঁকোটাও ফুট তিরিশেকের পরে গঙ্গায় ঝুলছে।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে ইছাপুর দেবীতলা ফেরি ঘাট তখন ভিড়ে উপচে পড়ছে। কোলে-কাঁখে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মহিলারাও চলে এসেছেন নৌকাডুবির ঘাটে বাণের দাপট দেখতে। ঘাটের কাছে উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর কমলেশ উকিল ছুটোছুটি করছেন, আর চিৎকার করে বলছেন, ‘‘আবার একটা বিপত্তি না হয়। মানুষের কী কোনও কাজ নেই? যেখানে বিপদ, সেখানে বাচ্চা কোলে ভিড় জমানোর দরকার কী বাপু?’’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘাটে জোয়ারের ঢেউয়ে ডুবন্ত লোহার খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় যাত্রীবাহী একটি নৌকো। জলে তলিয়ে না গেলেও জনা তিরিশেক যাত্রী ভরা গঙ্গায় হাবুডুবু খান।

Advertisement

উল্টো পাড়েই তেলেনিপাড়া ঘাটের জেটি ভেঙে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেবীতলা ঘাট সরেজমিনে দেখে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে নবান্নে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী। পরে সেখানেই যাত্রী-বোঝাই নৌকো উল্টে যাওয়ার খবর আসে। ফের আসেন মহকুমাশাসক। যাত্রীদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে জেটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এই ঘাটে পারাপার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবারই জলের তোড়ে বাঁশের যে সাঁকো দিয়ে নৌকোয় উঠতে হতো, তার অনেকটা ভেঙেছিল। শুক্রবার দুপুরে বাণ এসে নড়বড়ে সাঁকোকে কাত করে দিয়ে যায়। আর তাই দেখতেই মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। পাকাপোক্ত জেটি না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী জেটি আর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা যাবে না বলে প্রশাসন এ বার সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কারণ, এই ঘাটটি গঙ্গার বাঁকে। এখানে নদী চওড়া। আবার বাঁকের জন্য জোয়ার-ভাটা বা বাণের সময়ে জলোচ্ছ্বাসও বেশি হয়। যে কারণে কংক্রিটের বাঁধানো ঘাটও ভেঙে গিয়েছে। পীযূষবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা ফেরি চালান, তাঁদের তো এটুকু মাথায় রাখা উচিত। কংক্র্টের ঘাট যেখানে গঙ্গা গর্ভে চলে যাচ্ছে, সেখানে বাঁশের সাঁকো কতটা বিপজ্জনক!’’

ঘাটে পর্যাপ্ত আলো নেই। ঘোষপাড়া রোড পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যবস্থাও ভাল নয়। বৃষ্টি-বাদলের দিনে যান-বাহন মেলে না ঠিকমতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের মতে, আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ফের এই ঘাট চালু করার আগে জলে ডুবে থাকা খুঁটিগুলো সরানো দরকার। তাতে ধাক্কা লেগে এর আগেও বহু নৌকোর ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব দিক মাথায় রেখেই ঘাট চালু করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement