নারীশক্তি: মদের ঠেক ভাঙার পর। বাগদায়। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার পাশেই একটি টিনের ঘরে মদের আড্ডা। ঘরের মধ্যে ইতিউতি বোতলের ছিপি খুলে গ্লাস হাতে বসে গিয়েছেন খরিদ্দাররা। আধো-অন্ধকারে বেশ জমে উঠেছে মৌতাত।
হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে সেখানে ঢুকে পড়লেন শ’খানেক মহিলা। তাঁদের কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে ঝাঁটা, খুন্তি। দোকান থেকে মদের বোতল বার করে আছড়ে ভেঙে ফেললেন তাঁরা। ভাঙচুর করা হল টিনের ঘরটিও। সটান জানিয়ে দিলেন যে, ওখানে মদ খাওয়া ও বিক্রি করা চলবে না। মহিলাদের রণমূর্তি দেখে নেশাড়ুরা তখন যে যে দিকে পারেন পালাতে পারলে বাঁচেন। শনিবার রাতে বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের কুঠিবাড়ি মোড়ের ঘটনা।
এখানেই শেষ নয়, পাশেই বাগদার সাড়াহাটি বাজারে গমগম করে চলছিল অনলাইন লটারির দোকান। দোকানদার ও জুয়াড়িদের চোখ তখন আটকে কম্পিউটারের স্ক্রিনে। কেউ টাকা লাগাচ্ছেন, কেউ ব্যস্ত হিসাব কষতে। হঠাৎ সেখানেও হানা দিলেন লাঠি হাতে মহিলার দল। জানিয়ে দিলেন, মানুষকে সর্বস্বান্ত করার এই জুয়াখেলা এখনই বন্ধ করতে হবে। দোকান বন্ধ করে বাইরের দেওয়ালে পোস্টার সেঁটে দিলেন তাঁরা।
ওই দু’টি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দু’টি ঘটনাই শনিবার রাত ন’টা নাগাদ ঘটতে দেখা গিয়েছে বাগদার সাড়াহাটি বাজার ও সংলগ্ন কুঠিবাড়ি মোড়ে। স্থানীয় সাড়াহাটি, কুঠিবাড়ি, পূর্বপাড়া এলাকার শতাধিক মহিলা দলবদ্ধভাবে এসে বন্ধ করে দিয়েছেন লটারির দোকান, মদের ঠেক। শান্তিরক্ষা কমিটি তৈরি করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। দোকান বন্ধ করে সেঁটে দিয়েছেন পোস্টার। কুঠিবাড়ি গ্রামের সুমিতা সিংহ বলেন, ‘‘মদ খেয়ে, অনলাইন জুয়া খেলে বাড়ির পুরুষরা রোজগারের সব টাকা উড়িয়ে দিচ্ছে। মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরে অশান্তি করছে, পরিবারের সদস্যদের মারধর করছে। এই অবস্থা আমরা আর চলতে দেব না।’’ ওই গ্রামেরই মহিলা তাপসী রায় জানান, ‘‘আমার ভাসুর মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে অশান্তি করেন। বাড়িতে বাচ্চাদের পড়াশোনার পরিবেশটুকুও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ সাধনা সিংহ, রেখা কর্মকার, শঙ্করী সিংহেরা বলেন, ‘‘বারবার পুলিশকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। তাই আমরাই এ বার পথে নেমেছি। কোনও অবস্থাতেই আমরা এখানে মদের আর লটারির দোকান চালাতে দেব না। তার জন্য যতদূর যেতে হয় যাব।’’ মহিলাদের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। সাড়াহাটি বাজারের এক দোকানদার অশোক কর্মকার বললেন, ‘‘কিছুদিন আগেও মদ খেয়ে স্থানীয় কয়েকজন মানুষ মারা গিয়েছেন। মদ ও জুয়া বন্ধ হলে এলাকার মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন।’’ সিন্দ্রাণী গ্রামের শিক্ষক গৌর রায় বলেন, ‘‘এলাকার বেশ কিছু পরিবার শুধুমাত্র মদ ও জুয়ার কারণে শেষ হয়ে গিয়েছে। মহিলারা এগিয়ে এসে ঠেক বন্ধ করে দিয়ে ভালই করেছেন। সাধারণ মানুষকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’ সিন্দ্রাণীর পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপ্না মণ্ডলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’