অনুরোধ: স্কুলে চলছে বিক্ষোভ। ছবি: নির্মল বসু।
প্রধান শিক্ষকের বদলি রুখতে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন পড়ুয়া-অভিভাবকদের একাংশ। বসিরহাটের দক্ষিণ পিঁফা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা।
সম্প্রতি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সানা অন্য স্কুলে বদলি হয়েছেন। কিন্তু জনপ্রিয় এই শিক্ষকের বদলি মানতে পারছেন না পড়ুয়া-অভিভাবকেরা। বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার দুপুরে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে, প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। স্কুলের অন্য শিক্ষকেরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
বসিরহাট ১ ব্লকের দক্ষিণ পিঁফা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তৈরি হয় ১৯৫৩ সালে। গ্রামের মানুষই স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে টালির চালের ঘরে ক্লাস হত। ২০১৪ সালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান মধুসূদন সানা। স্থানীয় সূত্রের খবর, তারপর থেকে স্কুলের প্রচুর উন্নতি হয়েছে। তাঁর চেষ্টাতেই দোতলা পাকা স্কুলভবন তৈরি হয়েছে। পানীয় জলের অভাব মেটাতে স্কুল চত্বরে বসেছে কল। স্কুলের পঠনপাঠনের উন্নতিতে তাঁর অবদান রয়েছে বলে মনে করেন সকলেই। আশেপাশের কয়ালবাড়ি, কাঠাখালি, পিঁফা, রাঘবপুর, নতুনআবাদ-সহ বিভিন্ন গ্রামের ২২৮ জন পড়ুয়া এখানে পড়াশোনা করে। একজন পার্শ্বশিক্ষক-সহ ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন।
অভিভাবকেরা জানান, কোনও পড়ুয়া স্কুলে না এলেই প্রধান শিক্ষক বাড়ি গিয়ে বা ফোনে খোঁজ নেন। গ্রামের মানুষের আপদে-বিপদেও পাশে থাকেন। এমন একজন শিক্ষক বদলি হচ্ছেন, এ কথা জানাজানি হতেই এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকেরা স্কুলের সামনে হাজির হন। স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় অন্য শিক্ষকেরা মিড ডে মিলের খাবার দিতে এসে স্কুলের মধ্যে আটকে পড়েন। স্কুলের
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কেন স্যারকে বদলি করা হল, সে বিষয়ে আমরা অন্ধকারে। এতে মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন।” শিক্ষিকা টগরি মণ্ডল বলেন, “মধুসূদনবাবু আমাদের সকলের অত্যন্ত কাছের মানুষ। তাঁর জন্যই টেবিল, চেয়ার, ফ্যান, কল, রান্নাঘর, বাথরুম-সহ স্কুলের অনেক উন্নতি হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক সামিম কয়াল, হায়দার আলি কয়াল, শম্পা সাহারা জানান, হাসিমুখে প্রধান শিক্ষক যেমন ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের উন্নতি করেছেন, তেমনই গ্রামের মানুষকেও আপন করে নিয়েছেন। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধায় সব সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। পড়ুয়াদের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে তিনি দফতরে দফতরে ছুটে বেড়ান।
বিক্ষোভে উপস্থিত স্কুলের চতুর্থ শ্রণির দুই ছাত্রী জানায়, প্রধান শিক্ষক তাদের খুব ভালবাসেন। তাঁকে ছাড়া স্কুলে স্কুলে আসতে ভাল লাগবে না।
বদলির পরে ইতিমধ্যেই বাদুড়িয়ার এক স্কুলে যোগ দিয়েছেন মধুসূদন। এ দিন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সরকারি নির্দেশে ইতিমধ্যে নতুন স্কুলে যোগ দিয়েছি। বলা হচ্ছে, আমি নাকি উৎসশ্রীতে বদলির আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমি আবেদন করিনি।”
বসিরহাট নতুন চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুকন্যা গুহ বলেন, “ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অন্যত্র বদলির নির্দেশ আসায় তিনি চলে গিয়েছেন। অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের আবেগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”