শ্যামনগরে চারটি লাইনেই সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটির জন্য ব্যাহত হল ট্রেন চলাচল।— ফাইল চিত্র।
দিনের ব্যস্ত সময়ে শ্যামনগর স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা বিগড়ে বিপর্যস্ত হল ট্রেন চলাচল। শিয়ালদহ-নৈহাটি লাইনে শুক্রবার ঘণ্টা তিনেক ট্রেন চলেনি। ‘ম্যানুয়াল’ সিগন্যাল ব্যবহার করে কয়েকটি ট্রেন চালানো হলেও সকালের ব্যস্ত সময়ে বহু মানুষ ভোগান্তির শিকার হন। পরে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা মেরামত করা গেলেও এ দিন একাধিক ট্রেন অস্বাভাবিক দেরিতে চলেছে। বাতিল করা হয় ছ’জোড়া ট্রেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। কেন সিগন্যাল বিভ্রাট, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল।
পূর্ব রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ শ্যামনগর স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বিকল হয়ে পড়ে। ওই স্টেশনে আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। সিগন্যাল দেওয়া যায়নি বলে শিয়ালদহ মেন লাইনে একের পর এক স্টেশনে ট্রেন থমকে যায়। এক সঙ্গে আপ এবং ডাউনে চারটি লাইনের সিগন্যালে গোলযোগ দেখা দেয়। সকাল থেকেই শহরতলির ট্রেনগুলিতে অফিস যাত্রীদের ঠাসা ভিড় থাকে। প্রবল গরমে নাকাল হন ট্রেনে আটকে পড়া মানুষজন। যাত্রীদের ক্ষোভও বাড়তে থাকে। কেন ট্রেন বন্ধ, দীর্ঘক্ষণ তা জানতেই পারেননি যাত্রীরা। তাতে নানা বিভ্রান্তিও ছড়ায়। ফোনে ফোনে খবর নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন অনেকে। একটা সময়ে জানা যায়, সিগন্যাল বিভ্রাটেরর জেরেই এই পরিস্থিতি। কিন্তু কতক্ষণে পরিস্থিতি ঠিক হবে, তা জানাতে পারেননি স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে সড়ক পথে ব্যারাকপুর হয়ে কলকাতা যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাসেও ভিড় হয় প্রচুর। অটোর জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। মওকা বুঝে অনেক অটো-টোটো বেশি ভাড়া নিয়েছে বলেও অভিযোগ অনেক নিত্যযাত্রীর।
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অসীম বিশ্বাস কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘নৈহাটি স্টেশনে আমাদের ট্রেন আটকে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ পরে জানতে পারি, শ্যামনগর স্টেশনে সিগন্যালে গোলমাল ঘটেছে। বাসে করে ব্যারাকপুর যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভিড় বাসে উঠতেই পারিনি।’’ ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পরে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
হালিশহরের চন্দ্রিমা সরকার বারাসতের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ব্যারাকপুর হয়ে তিনি স্কুলে যান। এ দিন শ্যামনগর স্টেশনে আটকে পড়েছিলেন। তিনি জানান, অটোয় করে ব্যারাকপুর যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অটো পাননি। ফলে এ দিন স্কুল কামাই হয়েছে।
সিগন্যাল মেরামতির পরে সাড়ে দশটা নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হয়। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১৮টি আপ এবং ডাউন লাইনে ২২টি ট্রেন প্রচুর দেরিতে চলেছে। ৬ জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। পাঁচটি এক্সপ্রেস ট্রেনকে বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে আপ হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস, আপ মা তারা এক্সপ্রেস, আপ মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং ডাউন পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেস।