Ariadaha Incident

‘কামারহাটির নামে চুনকালি পড়ে গিয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ুন’, কাউন্সিলরদের হুঁশিয়ারি দিলেন বিধায়ক মদন

২১ শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সভার প্রস্তুতি সভায় দমদমের সাংসদ সৌগত রায়কে পাশে নিয়ে মদনের বার্তা, ‘‘যে কাউন্সিলরেরা দলের কথা শুনছেন না, নিজেদের মতো চলছেন, তাঁদের বলছি, ঘুমিয়ে পড়ুন।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কামারহাটি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৯
Share:

মদন মিত্র। —ফাইল চিত্র।

আড়িয়াদহকাণ্ড নিয়ে শোরগোলের মধ্যে কামারহাটি পুরসভার কাউন্সিলরদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন ওই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মদন মিত্র। তৃণমূল বিধায়ক জানিয়ে দেন, জয়ন্ত সিংহদের কীর্তি সামনে আসার পর রাজ্যের কাছে কামারহাটির মাথা হেঁট হয়েছে। তাই দলের যে কাউন্সিলেরা নিজেদের মর্জিমাফিক চলছেন, দলীয় অনুশাসন মানছেন না, তাঁদের সাবধান করলেন মদন।

Advertisement

২১ শে জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সভার প্রস্তুতি সভায় দমদমের সাংসদ সৌগত রায়কে পাশে নিয়ে কামারহাটি থেকে মদনের বার্তা, ‘‘যে কাউন্সিলরেরা দলের কথা শুনছেন না, নিজেদের মতো চলছেন, তাঁদের বলছি, ঘুমিয়ে পড়ুন। এক বছর পর আপনাদের ঘুমিয়ে পড়তে হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘একটি ঘটনার জন্য পশ্চিমবঙ্গে কামারহাটির নামে চুনকালি পড়ে গিয়েছে। তাই কান খুলে শুনে রাখুন, ২০২৬ সালে যাঁরা দিদিকে বলে কাউন্সিলর হবেন বলে ভাবছেন, তার আগে এখান থেকে তাঁদের নাম কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া হবে।’’ এখানেই থামেননি মদন। তিনি বলেন, বেলঘরিয়া, আড়িয়াদহে গুন্ডারাজ বন্ধ করতে পুলিশ কমিশনারের অফিসে মিছিল গেলে সবার আগে আমি যাব। পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে গিয়ে হাজিরা দেব।’’

আড়িয়াদহে এক ছেলে ও তাঁর মাকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগে জয়ন্ত ও তাঁর শাগরেদদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁরা জেল হেফাজতে ছিলেন। তার মধ্যেই গত সোমবার রাতে যুবক-যুবতীকে মারধরের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে (সেই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, জয়ন্তের ‘আদালত’ তালতলার ক্লাবে এক জনকে চ্যাংদোলা করে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এই ভিডিয়ো ঘিরে উত্তাল হয় রাজ্য-রাজনীতি। গ্রেফতার করা হন জয়ন্ত-সহ ছ’জন। বুধবার জয়ন্তকে ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালে আড়িয়াদহের বাসিন্দা রাহুল গুপ্তের বাড়িতে চুরি হয়। তাতে জড়িত সন্দেহে এক যুবক-যুবতীকে তালতলা ক্লাবে নিয়ে এসেছিলেন রাহুলই। জয়ন্তের শাগরেদরা ওই যুবককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ‘বিচার’ শুরু করেছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, কাউকে চোর সন্দেহ হলে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তো পুলিশ রয়েছে, তা হলে ক্লাবে কেন আনা হয়েছিল? এরই সঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘শাসকদলের ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার কারণেই কি এত দিন জয়ন্তের ‘মাতব্বরি’র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি পুলিশ? এ নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সরাসরি আড়িয়াদহ বা জয়ন্ত সিংহের নাম উচ্চারণ না করে তাঁর বক্তব্য ছিল, উপনির্বাচনে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই পুরনো ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

আড়িয়াদহের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের আবহে বুধবার তৃণমূল সাংসদ সৌগত দাবি করেছিলেন যে, তিনি একটি হুমকি ফোন পেয়েছেন। জয়ন্তকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে তাঁকে খুন করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মদন দাবি করেছেন, আড়িয়াদহের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলায় তিনিও হুমকি-ফোন পেয়েছেন। মদনের দাবি, তাঁকে ফোন করে বলা হয়, ‘‘তুই বাঁচবি না। কামারহাটিকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিস। তোকে গুলি করে দেব। গুলি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হ।’’ মদনের আরও অভিযোগ, ৪৬ সেকেন্ড ওই অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কথা হয়। বিধায়কের দাবি, তিনি ফোন রেকর্ড করতে পারেননি। সেটা তাঁর ব্যর্থতা। সৌগতের পাওয়া হুমকি-ফোন নিয়েও মদন বলেন, ‘‘সৌগত রায়কে যেখান থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেই ফোনের লোকেশন খুঁজে বার করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কারণ ওঁকে ফোন করার পরের দিনই আমার কাছে ফোন এল। আমি ভয় পাইনি। কারণ, এই ধরনের গুন্ডাদের আমি চিনি। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে পুলিশে এফআইআর করব।’’

অন্য দিকে, জয়ন্তকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘আমাকে কি দেখেছিলেন?’’ শুধু তা-ই নয়, কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে তাঁর ছবি ঘিরে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়েও মুখ খুললেন জয়ন্ত। দাবি করেছেন, মদনের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement