বিক্ষোভ: রাস্তায় বসে অবরোধ। নহাটায়। নিজস্ব চিত্র
গরমের ছুটিতে বিশেষ ক্লাস শেষে ছাত্রদের নিয়ে স্কুলের বাগান পরিচর্যায় মেতেছিলেন শিক্ষক। আচমকা সেখানে ঢুকে ওই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গেল একদল যুবক।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে চৌবেড়িয়া দীনবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে এলাকা। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা ওই স্কুলের সভাপতি অলোক নন্দীর ভাই ও ছেলে দলবল নিয়ে এসে ওই কাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। জয়দেব সরকার নামে ওই শিক্ষকের ‘অপরাধ’, তিনি নাকি ফেসবুকে অলোকবাবু এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুকথা ‘পোস্ট’ করেছেন, এই ছিল ওই যুবকদের অভিযোগ। যদিও জয়দেববাবু ওই ‘পোস্ট’ করার অভিযোগ মানেননি। শিক্ষককে হেনস্থা মানেননি প্রাক্তন ছাত্র, অভিভাবক, এলাকার লোকজনও। ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টা স্কুলের কাছে গোপালনগর-নিমতলা সড়ক অবরোধ করেন। তৃণমূল পরিচালিত চৌবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলে। পঞ্চায়েতেরও তালা খোলা হয়।
জয়দেববাবু বলেন, ‘‘ওরা ১৫-১৬ জন ছিল। গালিগালাজ করে জানতে চাইছিল, আমি ফেসবুকে কী পোস্ট করেছি? আমি কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে নিয়ে কোনও পোস্ট করিনি। ওরা হুমকি দেয়, মেরে আমার মুখের আকৃতি বদলে দেবে। স্কুলগেটের বাইরে বের হলে খুনেরও হুমকি দেয়।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তীর্থজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শনিবার স্কুলে যা ঘটল, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’ এসডিপিও (বনগাঁ) অশেষবিক্রম দস্তিদার জানান, ওই শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
তবে ভাই-ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানেননি অলোকবাবু। তাঁর দাবি, ভাই-ছেলে শনিবার স্কুলে ঢোকেনি। তিনি বলেন, ‘‘ওদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। ওই শিক্ষক আগে তৃণমূল করতেন। এখন বিজেপি করছেন। উনি ফেসবুকে আমার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করছেন। কিছু লোকজন তাঁর কাছে গিয়ে এ সব বন্ধ করতে বলেছেন। কেউ হুমকি দেননি। সিসি ক্যামেরার ছবি দেখলেই বোঝা যাবে। উল্টে বিজেপির লোকজন পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দিল।’’ তিনি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন জয়দেববাবু। বিজেপি নেতা স্বপন মজুমদারের দাবি, ‘‘এলাকার মানুষ দলমত নির্বিশেষে শিক্ষককে হুমকির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। আমাদের কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ক্ষুব্ধ মানুষ পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়েছেন। অলোকের অত্যাচারে মানুষ ক্ষিপ্ত।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়দেববাবু ওই স্কুলে ২১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। তিনি ভূগোল পড়ান। বরাবরই গরম এবং পুজোর ছুটিতে ওই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পরেও সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। সেইমতো শুক্রবার দুপুরে দ্বাদশ শ্রেণির বিশেষ ক্লাস নেওয়ার পরে পড়ুয়াদের নিয়ে জয়দেববাবু স্কুলের বাগান পরিচর্যা করছিলেন। তখনই ওই কাণ্ড।
বাসুদেব নন্দী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘স্কুলে ঢুকে যাঁরা শিক্ষককে হেনস্থা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। আমরা সেই দাবিতে পথে নেমেছি।’’ দেবাশিস দাঁ নামে এক প্রাক্তন ছাত্র বলেন, ‘‘এত সাহস ওরা কোথা থেকে পায়? আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’