গেটম্যান আশিস দাস।
স্টেশনে ঢোকার মুখে হঠাৎই রটে গেল খবরটা। কামরার তলা দিয়ে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে। সঙ্গে ধোঁয়া। নিমেষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রেন তখন গতি কমিয়েছে। কয়েক জন ঝাঁপ দেন ট্রেন থেকে। জখম হয়েছেন এক ছাত্রী-সহ কয়েক জন। পরে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির জন্যই এমন কাণ্ড। গেটম্যান যা বুঝতে পেরে তৎপর হন। সে কারণেই বৃহস্পতিবার বিকেলে বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেল হাড়োয়া স্টেশনের কাছে আপ হাসনাবাদ ৩৩৫৩১ লোকালে।
হাড়োয়ার ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার ব্রজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘ব্রেক ওয়েল্ডিং জ্যামের কারণে ঘর্ষণের ফলে আগুনের ফুলকির সঙ্গে ধোঁয়াও বের হচ্ছিল। সময় মতো গেটম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে চালককে ওয়াকিটকি মারফত ট্রেন থামাতে বলা হয়। বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। সব ঠিকঠাকের পরে বিকেল ৪টে ৫৫ নাগাদ ট্রেনটি হাড়োয়া স্টেশন থেকে বসিরহাটের দিকে রওনা দেয়।’’ সব মিলিয়ে ৩৭ মিনিট দাঁড়াতে হয় ট্রেনটিকে।
রেল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ লেবুতলা স্টেশন থেকে আপ হাসনাবাদ ট্রেনটি হাড়োয়ার দিকে আসছিল। হাড়োয়া স্টেশনে ঢোকার আগে ২১ নম্বর রেলগেটের গেটম্যান আশিস দাস দেখেন, ট্রেনের ৫ নম্বর বগির মহিলা কামরার আগের কামরার তলা থেকে হু হু করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সঙ্গে আগুনের ফুলকিও ছিটকোচ্ছে। তিনি বিষয়টি জানান স্টেশন ম্যানেজারকে। ট্রেনও দাঁড়িয়ে পড়ে অল্প ক্ষণের মধ্যেই। কিন্তু তত ক্ষণে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক দেখা দেয়। ট্রেন থামতেই গেটের পাশে দাঁড়ানো কয়েক জন মহিলা-সহ কিছু যাত্রী লাফিয়ে নামতে গেলে পাথরের খোয়ার উপরে পড়ে হাত-পা ছড়ে যায়।
সমস্যা অবশ্য এখানেই পুরো মেটেনি। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মালতিপুর স্টেশনে গিয়ে ফের ট্রেনটি বিকল হয়ে পড়ে। সেখান থেকে মেরামতির পরে বসিরহাটের দিকে চলে যায় ট্রেনটি।
মহিলা কামরায় থাকা বসিরহাটের বাসিন্দা চন্দ্রানী বসু, কাকলি বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘লেবুতলা স্টেশন ছেড়ে ট্রেনটি কিছুটা এগিয়ে আসার পরে ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছিলাম। হাড়োয়া স্টেশনে ঢোকার মুখে কামরা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি।’’ যে কামরার নীচে আগুন লেগেছিল, সেই কামরায় থাকা আশিস মণ্ডল, স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় লাইনের উপর লাফিয়ে নেমে পড়েছিলাম। গেটম্যান সময় মতো স্টেশন ম্যানেজারকে খবর না দিলে বড় বিপদ হতো।’’
যাঁর এত প্রশংসা, সেই গেটম্যান আশিস দাস অবশ্য নেহাতই নির্লিপ্ত। তার কথায়, সময় মত গেট বন্ধ করা যেমন আমার কাজ, তেমনই এ ধরনের ঘটনা দেখেও চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।’’