Civic Volunteers

অভিযোগ বিস্তর, এলাকায় যেন সিভিক-ই ‘পুলিশ’

তাঁদের অধিকাংশের নিয়োগই হয়েছিল কার্যত রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের হস্তক্ষেপে। শুরু থেকেই নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে এলাকায় ‘দাদাগিরি,’ তোলাবাজির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তাঁদের। পুলিশের একাংশের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ নিয়ে এলাকায় তাঁদের ‘প্রভাব’ বহু ক্ষেত্রেই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আর জি কর কাণ্ডে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় গ্রেফতার হওয়ার পরে জানা যাচ্ছে, এলাকায় কার্যত তিনিই ছিলেন ‘পুলিশ।’ জেলায় জেলায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে বিতর্ক খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

হেলমেটহীন মোটর বাইক আরোহীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে টাকা তোলা, সিগন্যাল ভাঙলে টাকা তোলার ঘটনায় আকছার সিভিক ভলান্টিয়ারদের জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক কালে। কোনও রকম চালান ছাড়াই অনেক সিভিক রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা তোলেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

কিছু ক্ষেত্রে জুয়া, মদের ঠেক থেকে টাকা তোলার অভিযোগও রয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। পুলিশ আধিকারিকদের এ সব অজানা নয়। তবে অনেক সিভিক ভলান্টিয়ারই তাঁদের ‘স্নেহধন্য’ হওয়ায় সাত খুন মাফ হয়ে যায় বলেও সাধারণ মানুষের অভিযোগ।

সমস্যার শিকড় আরও গভীরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘সমস্যাটা হচ্ছে, ওঁদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। এ দিকে, ওঁদের অনেক সময়ে তদন্তের কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের গোপনীয়তা ওঁরা ফাঁস করে ফেলেন। আসামীকে ধরতে যাওয়ার আগে কোনও কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার পরিবারের কাছে টাকা নিয়ে আগাম খবর পৌঁছে দেন বলেও শুনেছি। পুলিশের কাজে এতে সমস্যা হয়।’’

Advertisement

ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবার নানা এলাকাতেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের যথেষ্ট দাদাগিরি লক্ষ্য করা যায় বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। বিশেষ করে, রাস্তায় গাড়ি ধরে তোলাবাজির অনেক অভিযোগ রয়েছে। রাত বাড়লে এই সমস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাপট আরও বাড়ে বলে জানালেন মালবাহী ট্রাক, লরির চালক-খালাসিরা। এঁদেরকে সামনে রেখে থানার অফিসাররাই তোলাবাজি চালান বলেও অভিযোগ নতুন নয়।

বসিরহাট পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, পুরুষ সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিভিন্ন কুকর্মের কথা। বেশ কিছু সিভিক আছেন, যাঁরা সরাসরি শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত। অনেকে শাসক দলের বুথ সভাপতি। কেউ আবার স্ত্রীকে পঞ্চায়েত সদস্য করেছেন, তবে নিজেই সব কাজকর্ম দেখভাল করেন। শাসক দলের অনেক বিধায়ক আছেন, যাঁদের সঙ্গে সব সময়ে কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন। যা তাঁদের ডিউটির মধ্যে পড়ে না। অনেকেই এলাকায় মাতব্বরি করেন, এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেন বলে অভিযোগ। ভিলেজ পুলিশদের ক্ষেত্রেও এ ধরেনর অভিযোগ শোনা যায়।

হাসনাবাদ এলাকার এক প্রাক্তন পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘এক ভিলেজ পুলিশ আছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলে যত বার আসামী বা অবৈধ কারবারিদের ধরতে গিয়েছি, ধরতে পারিনি। আগে থেকে খবর পৌঁছে গিয়েছে।”

ভাঙড়ের উত্তর কাশীপুর থানা এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ মিদ্দে বিধাননগর কমিশনারেটে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ভাঙড়ের শাঁকশহর এলাকার ব্যবসায়ী রহমত মোল্লার ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। তা নিয়ে সমস্যার কারণে গত বছর ভাঙড়ের বালিগাদা এলাকা থেকে ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল ফিরোজের বিরুদ্ধে। পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায় ফিরোজ। পরে ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। ব্যবসায়ীর স্ত্রী রশিদা বিবি ভাঙড় থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। পুলিশ তদন্তে নেমে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে। ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়।

কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের ভাঙড়, চন্দনেশ্বর, উত্তর কাশীপুর ও পোলেরহাট থানা এলাকায় বহু সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন, যাঁদের অনেকেরই বিরুদ্ধে এলাকায় পুকুর ভরাট, জলাভূমি ভরাট, অবৈধ নির্মাণ, তোলাবাজি সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

তৃণমূলের সূত্রের খবর, ভাঙড়ের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ভাই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেন। কিন্তু তাঁকে কোনও দিন থানায় ডিউটি করতে দেখা যায় না। বরং, শাসক দলের বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে নেতা হিসেবে ভাষণ দিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ভাঙড়ের ডিভিশনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন কোনও অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ বিষয়ে ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ইতিমধ্যে ভাঙড়ে অপহরণের ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’’ আরজি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সওকাত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসন সিভিক ভলান্টিয়ার হোক বা যত বড় লাট সাহেব হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এক মিনিটও দ্বিধাগ্রস্ত নয়।’’

সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে কী কাজ করানো হবে, আর কোন কাজ করানো যাবে না— তা নিয়ে গত বছর ৩ মার্চ রাজ্য পুলিশের তরফে বিভিন্ন পুলিশ জেলায় লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়। তা কতটা মানা হচ্ছে, প্রশ্ন আছে তা নিয়েই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement