প্রতীকী ছবি।
হাতে ওয়ান শটার নিয়ে বাইরে বেরোতে বাধা দিতেই মায়ের মাথা লক্ষ্য করে সটান ট্রিগার টিপে দিয়েছিল মত্ত অবস্থায় থাকা ছেলে। গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় প্রৌঢ়ার মাথা। রবিবার ভাটপাড়ার সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে, বছর তিরিশের মহম্মদ নিশারকে গ্রেফতারের পরে সোমবার তাকে কোর্টে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত হয়। সেই সঙ্গে এ বার তাদের প্রতিবেশী যুবক আকবরের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। যে ওয়ান শটার দিয়ে মাকে খুন করেছিল নিশার, সেটি আকবরই তাকে দিয়েছিল বলে দাবি ধৃতের। তবে ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে আকবর।
রবিবার ভাটপাড়া পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচ নম্বর সাইডিং এলাকার বস্তিতে ওই ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সালমা বিবির (৬০)। বছর তিরিশের মহম্মদ নিশারকে ওই ঘর থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত হয় ওয়ান শটারটিও। পুলিশ জানায়, নিশারের স্ত্রী মাসুমা বিবি আগেই জানিয়েছিলেন, এক দিন আগে ওই আগ্নেয়াস্ত্রটি নিশারের কাছে রাখতে দিয়েছিল আকবর। নিশারও জেরায় এমন কথাই দাবি করেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এ দিন নিশারকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। ঘটনায় আইনজীবী থেকে বিচারক সকলেই স্তম্ভিত। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিশার নিয়মিত মদ্যপান করত। মাসুমারও দাবি, ঘটনার সময়ে নিশার মত্ত অবস্থায় ছিল। তাই এই ঘটনা খুন নাকি অনিচ্ছাকৃত খুন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। পুলিশ অবশ্য খুনের মামলাই দায়ের করেছে। একই সঙ্গে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কে কেন নিশারকে অস্ত্র রাখতে দিয়েছিল, তা তদন্তসাপেক্ষ। বন্দুকে যে গুলি ভরা ছিল সেটা নিশার জানত কি না, তা-ও যেমন এ বার জেরায় জানা যাবে। এ ছাড়া বেআইনি অস্ত্র রাখা ও নিশারের কার্যকলাপ নিয়েও আমরা খোঁজখবর করছি।’’
প্রতিবেশীরা অবশ্য নিশারের পুরনো কোনও দুষ্কর্মের কথা জানেন না। প্রতিবেশী মুন্না মুদি বলেন, ‘‘নিশার নেশা করত ঠিকই, কিন্তু অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এমন কথা জানা নেই। তবে আকবরকে ধরা দরকার।’’ ঠিক কী কারণে এই খুন, তা এখনও জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। পলাতক আকবরের বাড়িতে এ দিন তল্লাশি চালায় পুলিশ। একই সঙ্গে নিশারের বাড়িতেও তল্লাশি চলে।
এই ঘটনার পিছনে মূলত শিক্ষা ও কর্মহীন সমাজের ছবিটাই স্পষ্ট— এমনটাই বলছেন মনোবিদেরা। কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ চিকিৎসক কৌস্তুভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মনের অসুখ নিয়ে যাঁরা আসেন, তাঁরা অশিক্ষিত নন। কিন্তু শিক্ষার আলো যাঁদের ছোঁয়নি, এমন মানুষেরও কি মন থাকতে নেই? তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। তারা হয় অন্তর্মুখী, নয়তো বহির্মুখী সমস্যায় ভোগে।’’ তাঁর মতে, দারিদ্র, খাদ্যের সংস্থান ছাপিয়ে মাফিয়া হওয়ার স্বপ্ন দেখে মূলত কিশোর-যুবকেরা। নিশারের ক্ষেত্রে যেটা খুব স্বাভাবিক। এরা যে ভাবে যাকে ক্ষমতাবান বলে মনে করে, তখন তার বা তাদের মতোই হতে চায়। হয়তো আকবরকে ক্ষমতাবান ভেবে তার বশ হয়েছিল নিশার। তাই মায়ের সাবধানবাণী তার পছন্দ হয়নি।