প্রতীকী ছবি।
হাতে আর মাত্র কয়েক মাস। বছর ঘুরলে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে নিজেদের দলীয় সংগঠন আরও শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ করল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
জেলার প্রায় ৭ হাজার ৭০০ বুথ কমিটি ঢেলে সাজাতে শুরু করেছে দল। জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠানো শুরু হয়েছে। জেলা রাজনৈতিক মহল মনে করছে, লোকসভা ভোটে এই জেলায় বিজেপির ভাল ফল করার অন্যতম কারণ ছিল, স্থানীয় তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর দুর্ব্যবহার এবং জনবিচ্ছিন্নতা। বাড়ি বাড়ি যাওয়ার মাধ্যমে বিধানসভা ভোটের আগে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠাই তৃণমূল নেতৃত্বের লক্ষ্য।
জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রতিটি বুথে একজন করে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হচ্ছে। তাঁর অধীনে থাকবেন ১০ জন করে কর্মী। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘বুথ স্তরে একজন কো-অর্ডিনেটরের নেতৃত্বে ১০ জন সদস্য থাকছেন। ওই সদস্যেরা তাঁদের বুথের প্রতিটি বাড়িতে সপ্তাহে দু’দিন করে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুফল তাঁরা কতটা পাচ্ছেন, সে সম্পর্কে কর্মীরা খোঁজ-খবর নেবেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ থাকলে তার সমাধান করবেন।’’
গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বিজেপি ভাল ফল করেছে। জেলার পাঁচটি লোকসভা আসনের মধ্যে ২টি ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। বনগাঁ ও ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর এবং অর্জুন সিংহ। জেলার গ্রামীণ এবং শহর এলাকায় বিজেপির প্রভাব বেড়েছে অনেকটাই। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়, ২০০৮ সাল থেকে যে মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক একচেটিয়া শাসকদলের অনুকূলে ছিল, লোকসভা ভোটে তাতে বড়সড় ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের লড়াই এখানে শাসকদলের পক্ষে খুব সহজ হবে না বলেই মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৩৩টি বিধানসভা এলাকায় বিধানসভাভিত্তিক কর্মিসভা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকের মাধ্যমে জ্যোতিপ্রিয় ওই কর্মসূচি শুরু করেছেন। রবিবার অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রে একই রকম বৈঠক করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রতিটি বুথে মাসে দু’টি করে বৈঠক করতে হবে। বৈঠকের আলোচনার সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে জেলা কমিটিকে জানাতে হবে। দল এবং প্রশাসনিক পদে একই ব্যক্তিকে রাখা হবে না। পুরপ্রশাসক, পঞ্চায়েত প্রধান বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা একই সঙ্গে দলের শহর কমিটি বা ব্লক কমিটির সভাপতির পদে থাকতে পারবেন না। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কাউকে দলের ব্লক বা শহর সভাপতি পদে ও প্রশাসনিক পদে একই সঙ্গে রাখা হবে না। যে কোনও একটি পদে রাখা হবে। দলের হাবড়া ১ ব্লকের সভাপতি অজিত সাহা। তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কিন্তু তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য তাঁকে দু’টি পদেই রাখা হচ্ছে।’’
জেলা স্তরেও সম্প্রতি কিছু অদল বদল করা হয়েছে সংগঠনকে মজবুত করতে। নতুন করে পাঁচজনকে কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে। প্রত্যেককে কয়েকটি করে বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের পরিবর্তে যুব তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছে দেবরাজ চক্রবর্তীকে। নতুন করে যুব তৃণমূলের সংগঠনও শক্তিশালী করা হচ্ছে। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো ‘বসে যাওয়া’ নেতা কর্মীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।