বুথের পথে ভোটকর্মীরা। শুক্রবার, দেগঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দিন থেকে উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছিল। ভোটের এক দিন আগেও তা কমানো যায়নি। বরং বোমার আঘাতে এক ছাত্রের মৃত্যু, দেগঙ্গায় উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক গুণ। অভিযোগ, এর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে এলাকায় বাড়ছে ‘বহিরাগতদের’ আনাগোনা। শাসক ও বিরোধী দলের সমান টক্কর তা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বারাসত, অশোকনগর, হাবড়া, বাদুড়িয়া পুরসভা ঘেরা দেগঙ্গা ব্লকে পঞ্চায়েত ভোটে বরাবরই বহিরাগত একটা প্রধান সমস্যা বলে অভিযোগ। আগে ভোটে ঝামেলা থেকে শুরু করে ভয় দেখানো, ভোট নিয়ন্ত্রণ সবটাই হয়েছে তাদের দ্বারা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘বহিরাগতদের’ ‘কারসাজিতে’ কোণঠাসা বিরোধীরা ভোট ময়দানে কার্যত নামতেই পারেননি বলে অভিযোগ। যদিও শাসকের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল। তবে এ বারের নির্বাচনে বিরোধীদের পালে কিছুটা হাওয়া লেগেছে। সমান সমান টক্করের ফলে দেগঙ্গায় বহিরাগতদের আসার আশঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
যার আভাস মিলতে শুরু করেছে ভোটের এক দিন আগে থেকেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেগঙ্গার একাধিক এলাকায় অচেনা মুখের ভিড় বাড়ছে বলে অভিযোগ। রাতে বেশ কয়েকটি ক্লাবে বসছে অচেনা মুখের ‘আড্ডা’। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারী বুটের শব্দেও সেই ‘আড্ডা’ আটকানো যায়নি৷ চৌরাশি এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বাইকবাহিনীর দেখা মিলছে বলে অভিযোগ।
দেগঙ্গার অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই এ বার শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী হিসেবে রয়েছে আইএসএফ-বাম জোট। পাশাপাশি, শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে নির্দল হিসেবে দাঁড়ানো প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও লড়াই তৃণমূলের। বিরোধীদের অভিযোগ, পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে আভাস পেয়ে পুর এলাকা থেকেই দেগঙ্গায় সন্ত্রাসের জন্য ‘বহিরাগত’ জোগাড় করছে শাসকদল। ভোটের দিন যা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। দেগঙ্গার ৪২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আইএসএফ-বাম জোট প্রার্থী তথা আইএসএফের জেলা কমিটির সম্পাদক মহম্মদ কুতুবউদ্দিন বললেন, ‘‘শাসকদল জিতবে না বুঝতে পেরেই ইচ্ছাকৃত ভাবে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। এলাকায় বহিরাগত ঢোকাচ্ছে। রাত হলেই আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ একই সুর শোনা গেল সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যের গলাতেও।
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। তারা বরং তাদের সমর্থক একটি পরিবারের এক সদস্যের খুন হওয়ার অভিযোগে আঙুল তুলছে বিরোধীদের দিকেই। বাইরে থেকে লোক এনে ভিড় বাড়ানোর পাল্টা অভিযোগ করছে শাসকদল। দেগঙ্গা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আনিসুর রহমান বিদেশ বলেন, ‘‘মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত তো এখানে ঝামেলা ছিল না। আমরা জানি, জিতব। বিরোধীরা হারবে বুঝতে পেরেই গোলমাল পাকাতে চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার রাতেও এক কর্মীকে লক্ষ্য করে বোমা মারা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে।’’