ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার কিশোরের, অনলাইন গেমের নেশায় বুঁদ

এ বার নতুন বিপদ সামনে নিয়ে এল, ‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ সংক্ষেপে সিওসি। ব্লু হোয়েলের মতো এ-ও এক অনলাইন গেম। সরাসরি মৃত্যুর হাতছানি না থাকলেও ‘সিওসি’ খেলার আসক্তিও ডেকে আনতে পারে ভয়ানক পরিণতি। তারই সাক্ষী থাকল বসিরহাট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share:

আকাশ দাসের ছবি।

নীল তিমির আস্ফালন থেকে কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা করতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন-স্কুল। এ বার নতুন বিপদ সামনে নিয়ে এল, ‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ সংক্ষেপে সিওসি। ব্লু হোয়েলের মতো এ-ও এক অনলাইন গেম। সরাসরি মৃত্যুর হাতছানি না থাকলেও ‘সিওসি’ খেলার আসক্তিও ডেকে আনতে পারে ভয়ানক পরিণতি। তারই সাক্ষী থাকল বসিরহাট।

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরে ‘সিওসি’-র নেশায় জড়িয়ে পড়েছিল বসিরহাটের ছোট জিরাকপুরের আকাশ দাস (১৮)। বুধবার তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে ঘর থেকে। যে বন্ধুদের সঙ্গে ‘সিওসি’ খেলত আকাশ, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে তাদের মেসেজ পাঠিয়েছিল। লিখেছিল, ‘সবাই ভাল থেকো। কাল থেকে আমি আর অনলাইন থাকছি না।’

আকাশের মৃত্যুর পরে তার বাড়ির লোকজনের দাবি, খেলার নেশায় বাড়ি থেকে বেরোনোই ছেড়ে দিয়েছিল ছেলেটা। মাধ্যমিক পাস করার পরে একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু পড়াও ছেড়ে দেয়। ‘‘ওই খেলার নেশাই কাল হল’’— বলছেন বাবা কেনারাম দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ওই প্রাণঘাতী খেলা যেন আর কেউ না খেলে, পুলিশ সেটা দেখুক।’’ আকাশের ভাই সাগর বলে, ‘‘দাদা দিনরাত সিওসি খেলত। যুদ্ধের এই খেলায় দাদা নবম ধাপ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এগারোতম ধাপে পৌঁছতে পারলে বিশ্বরেকর্ড হবে বলত। সে জন্য সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত যখনই সময় পেত মোবাইল হাতে বসে যেত।’’ খেলায় জিততে না পারার হতাশা থেকেই আকাশ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছে তার পরিবার।

Advertisement

ভাচুর্য়াল জগতে খেলার নেশা থেকে কেউ সরাসরি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে বলে অবশ্য মনে করছেন না মনোবিদেরা। মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের মতে, আগে থেকেই হয় তো কোনও বিষণ্ণতা, একাকীত্ব বা হতাশায় ভুগছিল ছেলেটি। যে কারণে ভার্চুয়াল জগতে খেলায় জয়-পরাজয় তার কাছে এত বড় হয়ে দাঁড়াল।

আকাশের মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেটি পরীক্ষা করে দেখা হবে। আকাশের এলাকারই আরও ১০-১৫ জন অল্পবয়সী ছেলে এই খেলায় জড়িয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেনারামবাবু বেসরকারি সংস্থার কর্মী। স্ত্রী সবিতা এবং দুই ছেলে আকাশ-সাগরকে নিয়ে টালির চালের ঘরে সংসার তাঁর। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে বড়ছেলেকে মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন কেনারামবাবু। তারপর থেকেই অনলাইন গেমে মাতে আকাশ। ইদানীং ঘর থেকে বিশেষ বেরোতো না। পাড়া-পড়শিদের সঙ্গেও মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছিল।

বুধবার বিকেলে কেনারামবাবু কাজে বেরিয়েছিলেন। স্ত্রী প্রতিবেশীর বাড়িতে যান। ছোট ভাই গিয়েছিল কম্পিউটার ক্লাসে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাড়ি ফেরে সাগর। দরজা ঠেলে দেখে, দাদার দেহ ঝুলছে ঘরে।

মৃত্যুর আগে মোবাইলে সব গেম ডিলিট করে দিয়ে গিয়েছে আকাশ। তার দেহ যখন কাপড়ের ফাঁসে ঝুলছে ঘরে, তখন মোবাইলে বাজছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত। ‘‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।’’

‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ কী?

‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ একটি মোবাইল ভিডিয়ো গেম। যাকে বলা হয় ‘স্ট্র্যাটেজি গেম’। অর্থাৎ, নানা রকম পরিকল্পনা করে এগোতে হয় খেলায়। কাল্পনিক জগতে খেলোয়াড় এক গ্রামের প্রধান। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করে অর্জিত সম্পদ দিয়ে নিজের শহর বানাতে হয় তাকে। খেলোয়াড়েরা জনগোষ্ঠী (ক্ল্যান) তৈরি করে। অন্য ক্ল্যানের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement