চিকিৎসাধীন মোহনী। নীচে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের আবেদন
পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে নার্সিংহোমে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এক শিক্ষিকা। চিকিৎসার বিপুল খরচের টাকা সংগ্রহ করতে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন বসিরহাটের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ হাইস্কুলের অঙ্কের দিদিমণি মোহনী রায়। মঙ্গলবার নিউ ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে স্কুলে আসছিলেন। সকাল ৯টা নাগাদ হিঙ্গলগঞ্জ থানার লাউতলার কাছে তাঁদের অটোয় ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। অটোর ডান দিকে বসেছিলেন বছর বত্রিশের মোহনী। গুরুতর জখম হন। আপাতত কলকাতার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। ডান হাত, ডান পা ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নার্সিংহোম সূত্রের খবর। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। পরিবারের দাবি, পরবর্তী চিকিৎসার জন্য আরও প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দরকার বলে জানিয়েছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। দরকার। যা তাঁদের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিষয়টি ছড়িয়ে দেন এই পরিস্থিতিতে মোহনীর কয়েক জন সহকর্মী ও পরিচিত মানুষ। এরপরে ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট শেয়ার হতে থাকে। বসিরহাটের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদেরও তা নজরে আসে। তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বহু অপরিচিত মানুষও ফেসবুকে পোস্ট দেখে এগিয়ে এসেছেন সাহায্য করতে। হিঙ্গলগঞ্জ রানিবালা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গার্গী চন্দ বলেন, ‘‘আমরা মোহনীর জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছি। আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকেও খবরটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিচিত-অপরিচিত বহু মানুষও এগিয়ে আসছেন।’’ গার্গী জানান, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের পাশাপাশি একটি ‘অনলাইন ক্রাউডফান্ডিং’ সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তাঁরা। তারাও মোহনীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। বিধায়ক, বিডিও, সাংসদ-সহ অন্যান্য ব্যক্তিদের কাছেও সাহায্যের আবেদন নিয়ে পৌঁছনোর পরিকল্পনা আছে তাঁদের।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা গিয়েছে বলে জানান ঈপ্সিতা গুহ নামে এক শিক্ষিকা। যোগেশগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি সকলের খুব প্রিয় শিক্ষিকা। অনেক মানুষ এগিয়ে আসছেন। তবে খরচ বিপুল। সরকারি সাহায্যও প্রয়োজন।’’ নিখিল জানান, মোহনীর বাবা বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। দেখা হয়নি। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।দুর্ঘটনার দিন অটোয় মোহনীর পাশে বসেই স্কুলে আসছিলেন তাঁর সহকর্মী নিবেদিতা রায়। বললেন, ‘‘আজ মোহনীর যে অবস্থা, তা আমারও হতে পারত। ও যেখানে বসেছিল, সেখানে আগে আমিই বসেছিলাম। আমি যদি পড়ে যাই, সে কথা ভেবে আমাকে সরিয়ে ও নিজে অটোর ধারে বসে।’’ তিনি জানান, শুক্রবার ফের অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। প্রয়োজনীয় টাকা তোলার জন্য সকলে মিলে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।