বাসন্তীর সংগ্রহকেন্দ্রে দুধ এনেছেন গ্রামের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র ।
সাফল্য পেল সুন্দরবনের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে গঠিত সুন্দরীনি প্রকল্প। সম্প্রতি প্যারিসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী। সুন্দরবনের মহিলারা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর ও সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের সহায়তায় এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী চালায়৷ সুন্দরবনের এই দুগ্ধ সমবায়কে আন্তর্জাতিক ডেয়ারি ফাউন্ডেশনের ‘ডেয়ারি ইনোভেশন’ সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে। দিন কয়েক আগে প্যারিসে ওই সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে বাংলার এই ডেয়ারিকে সম্মানিত করেছে। গোটা বিশ্বের ১৫৩টি ডেয়ারি সংস্থা ওই সম্মানের জন্য আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়েছে বাংলার সুন্দরীনি। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের সমবায় সংস্থার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাংলার মানুষ। উচ্ছ্বসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘‘সুন্দরবনের মহিলাদের সাফল্যে আমরা উচ্ছ্বসিত। আমি সুন্দরীনি দুগ্ধ সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের এবং আধিকারিকদের শুভেচ্ছা জানাতে চাই।”
সূত্রের খবর, প্রত্যেক দিন প্রায় ২০০০ লিটার দুধ এবং ২৫০ কেজি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে সুন্দরীনি। ৪ কোটি টাকা গ্রামীণ মহিলাদের জন্য গত অর্থবছরে এই প্রকল্প থেকে আয় হয়েছিল। প্রকল্পে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার মহিলা যুক্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের ৯টি ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন। ৭০টি সমবায় সমিতি তৈরি করে এই ন’টি ব্লক থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। সেখানে চিলিং পয়েন্টে রেখে দুধ ঠান্ডা করার পরে কলকাতার চৌবাগা এলাকায় সুন্দরীনির কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক দিকে যেমন দু’হাজার লিটার দুধ বোতলজাত করা হয়, তেমনই বাকি দুধ দিয়ে নানা ধরনের দুগ্ধজাত দ্রব্য তৈরি করা হয়। এরপরে এই সমস্ত উৎপাদিত পণ্য শহর কলকাতা সহ বিভিন্ন রেল স্টেশন, বিমানবন্দরের আউটলেট থেকে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে রাজ্যে সুন্দরীনির মোট ১৭টি আউটলেট রয়েছে।
প্রকল্পের বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর অম্বিকা প্রসাদ বলেন, “মূলত জৈব পদ্ধতিতে এই দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদনই আমাদের লক্ষ্য। কাজ করতে গিয়ে এক দিকে যেমন দুধ ও দুধজাত দ্রব্য উৎপন্ন হচ্ছে, তেমনই জৈব চাষের মাধ্যমে অন্যান্য ফসলও উৎপন্ন হচ্ছে। আর এই গোটা বিষয়ের জন্যই আন্তর্জাতিক স্তরে এই সম্মান পেয়েছি আমরা।” প্রকল্পের চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “এই পুরস্কার আমাদের অনেক উৎসাহিত করেছে। আগামী দিনে প্রকল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব আমরা। উৎপাদন কী ভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টাও করা হবে।” সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার কথায়, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিকপ্রসূত এই সুন্দরীনি প্রকল্প। ২০১৫ সালে শুরু হয়। তখন অল্প মহিলা যুক্ত ছিলেন। দিন দিন বহু মহিলা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে কতটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেন, তার প্রমাণ এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার।”
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা নীলিমা মণ্ডল, স্বপ্না দাসেরা বলেন, “এই কাজ করে আমরা অনেক বেশি আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। আগের তুলনায় উৎপাদন যেমন বেড়েছে, মুনাফাও বেড়েছে।”