চলছে রেল পুলিশের নজরদারি। —নিজস্ব চিত্র।
বনগাঁ লোকালে নিত্যযাত্রীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সক্রিয় হল রেল পুলিশ। বেআইনি ভাবে সিট বুকিংয়ের অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মঙ্গলবার।
দিন কয়েক আগে বনগাঁর খলিতপুরের বাসিন্দা শোভন পাল স্ত্রী দুর্গাদেবীকে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে যাবেন বলে বনগাঁ স্টেশনে এসেছিলেন। টিকিট কেটে সকাল সাড়ে ৭টার বনগাঁ–মাঝেরহাট লোকালের সিটে গিয়ে বসেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই দম্পতি দেখেন, পাশের ও সামনের সিটে এক যুবক এসে কয়েকটি খবরের কাগজ রেখে চলে গেল। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে কয়েকজন নিত্যযাত্রী ওই কামরায় উঠে খবরের কাগজ সরিয়ে বসে পড়লেন। শোভনবাবু তখনও জানেন না, সিটে বসার জন্য কী মাসুল গুনতে হবে তাঁকে।
শুরুতেই তুইতোকারি। শোভনবাবুর অভিযোগ, ধোপদুরস্ত চেহারার এক যাত্রী বলেন, ‘‘তুই কাগজ সরিয়ে বসেছিস। উঠে যা।’’ শোভনবাবু প্রতিবাদ করেন। সিটও ছাড়েননি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে শুরু চলতে থাকে নানা কটূক্তি। স্ত্রীকে বাধ্য হয়ে মহিলা কামরায় চলে যেতে বলেন শোভনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘দেখেশুনে সকলকে ভদ্র পরিবারের বলেই মনে হয়। কিন্তু মুখের যা ভাষা। দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয় ওরা।’’
তবে জেদ চেপে যায় শোভনবাবুরও।
ওই ঘটনার পরে সোমবার ফের ওই ট্রেনের কামরায় পরিস্থিতি দেখতে যান তিনি। শোভনবাবুর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। তাঁরা সিট থেকে খবরের কাগজ, দেশলাইয়ের খাপ, চিরুণী তুলে দেন। খবরের কাগজ নিয়ে আরপিএফ অফিসে জমা দেন। শোভনবাবু বনগাঁ জিআরপি থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে আরপিএফ ও জিআরপি বেআইনি সিট বুকিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। বেআইনি ভাবে সিট বুকিং করে রাখার অপরাধে এ দিন আরপিএফ ৬ জন যাত্রীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা হয়েছে। জিআরপি প্রচুর খবরের কাগজ, দেশলাই সিগারেটের খাপ উদ্ধার করেছে। আরপিএফ জানিয়েছে, অভিযান চলবে।
সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় সকালের দিকের ট্রেনগুলিতে এ ভাবেই এক শ্রেণির নিত্যযাত্রী সিট বুকিং করে যাতায়াত করেন। নতুন কেউ এলে না বুঝে দেশলাইয়ের খাপ সরিয়ে বসে পড়লে চূড়ান্ত হেনস্থা হতে হয়। জোর করে তুলেও দেওয়া হয় অনেককে। বনগাঁ থেকে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পরে দেখা যায়, অনেক আসনে শুধু খবরের কাগজ, দেশলাই পড়ে। দূরবর্তী কোনও স্টেশন থেকে হয় তো যাত্রী উঠে বসবেন সেখানে। কিন্তু তাঁর সহযাত্রীরা সিট বুকিং করে রেখেছেন। সে সব সরিয়ে ফাঁকা আসনে বসার সাহস দেখান না বাকি যাত্রীরা। দিনের পর দিন চলে এই দাদাগিরি।
মাঝে কিছু দিন এই প্রবণতা কমলেও ফের তা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সকালে দিকে পরিবারের মহিলাদের নিয়ে অনেকেই তাই অপমানিত হওয়ার ভয়ে ট্রেনে যাতায়াতই ছেড়ে দিয়েছেন।
নিত্যযাত্রীদের সকলেই যে এই ব্যবহার করেন, তা নয়। কিন্তু কিছু দুর্বিনীত মানুষের অসভ্যতা এবং অমানবিক আচরণের জন্য নাম খারাপ হচ্ছে বনগাঁ লোকালের।