আশ্রিত: স্কুলের শ্রেণিকক্ষেই চলছে রান্না। ছবি: সুজিত দুয়ারি
স্কুলের ত্রাণশিবিরে এখনও আশ্রয় নিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বানভাসি পরিবার। তাদের স্কুলে রেখেই মঙ্গলবার থেকে পঠন পাঠন শুরু হচ্ছে হাবড়া মডেল হাই স্কুলে।
দিন কয়েক আগে টানা বৃষ্টিতে জল জমে হাবড়া পুরসভা এলাকার বহু জায়গায়। হাবড়া মডেল হাই স্কুলে খোলা হয় ত্রাণ শিবির। এখনও অনেক জায়গায় জল পুরোপুরি নামেনি। ফলে প্রায় দেড় মাস ধরে এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার স্কুলের ত্রাণ শিবিরে রয়েছে। এত দিন স্কুলে পাঠন পাঠন বন্ধ থাকায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে স্কুল খুলে যাচ্ছে। হাবড়া পুরসভা সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, আপাতত বানভাসি পরিবারগুলিকে স্কুলে রেখেই চালু হবে স্কুল।
পুরসভা সূত্রের খবর, মূলত ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং সংলগ্ন এলাকার পরিবারগুলিকে হাবড়া মডেল হাই স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি পরিবার ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। তবে ১১টি পরিবার এখনও স্কুলে রয়েছে। তাঁদের বাড়ির জল সরেনি। পুরপ্রশাসক নারায়ণ সাহা বলেন, “স্কুলে পরিবারগুলি ভাল আছে। স্কুলের ৬টি ঘরে তাঁদের রাখা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা স্কুলেই থাকবেন। পঠন পাঠনে কোনও অসুবিধা হবে না। আশা করছি সাত দিনের মধ্যে তাঁদের বাড়ি ফেরাতে পারব।”
বৃষ্টিতে এবার পুরসভার ৭, ৮, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড-সহ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল। পাম্প চালিয়ে ইতিমধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকার জল নামানো গিয়েছে। কিন্তু দেড় মাসেও কেন জল নামল না ওই দুই ওয়ার্ড থেকে? নারায়ণ বলেন, “এবার বৃষ্টি হয়েছে বেশি। ৭, ৮ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড নিচু এলাকায়। স্বাভাবিক ভাবেই জল জমে। তাছাড়া নদিয়া জেলার একাংশের জলও অশোকনগর হয়ে এখানে জমা হয়। সে কারণে কিছুটা সময় লাগছে। এখন ২৭ টি পাম্প চলছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে জল সরিয়ে ফেলা যাবে।”
পঠন পাঠন শুরু হয়ে গেলে স্কুলে থাকতে সমস্যা হবে বলেই জানাচ্ছেন বানভাসি পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জানান, মহিলা-বাচ্চা নিয়ে থাকতে অসুবিধা হবে। বিশেষ করে স্নান, শৌচালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাঁরা চাইছেন দ্রুত বাড়ি ফিরতে। কিন্তু এখনও অনেকেরই ঘর-উঠোনে জল জমে রয়েছে। ফলে বিকল্প না থাকায় তাঁদের স্কুলে থাকতে হচ্ছে। সোমবার হাবড়া মডেল হাই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল শ্রেণিকক্ষের মধ্যে খাট, গ্যাস-ওভেন নিয়ে সংসার পেতেছেন বানভাসি মানুষেরা। তাঁদেরই একজন বৈশাখী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটি ছেলেদের স্কুল। ফলে স্কুল খুললে আমরা মহিলারা অসুবিধার মধ্যে পড়ব। আমরা দ্রুত বাড়ি ফিরতে চাই।” মানু রায় নামে এক মহিলার কথায়, “বাড়িতে এখনও হাঁটু সমান জল। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে শীতের মধ্যে স্কুলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত জল নামানোর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।” শিবিরে আশ্রয় পাওয়া দশম শ্রেণির পড়ুয়া অমিত দাস এই স্কুলেরই ছাত্র। কিন্তু বই বাড়িতে জলের মধ্যে। তাই কী ভাবে স্কুল করবে বুঝতে পারছে না সে।
হাবড়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান করণিক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “স্কুল খোলার যাবতীয় প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। স্কুলে পর্যাপ্ত ঘর আছে। ক্লাস হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। ফলে বানভাসিদের নিয়ে অসুবিধা হবে না। স্কুল খেলার পাশাপাশি, মানবিক ভাবে বানভাসিদের কথাও ভাবতে হচ্ছে। ওঁদের বলা হয়েছে স্কুল চলাকালীন ঘর থেকে না বেরোতে।”