Abdur Razzak Molla

রাজনৈতিক পরামর্শ নিতে পুরনো ‘গুরু’র দ্বারে সওকাত

সম্প্রতি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লাকে ভাঙড় বিধানসভার পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। মঙ্গলবার সকালে রেজ্জাকের ভাঙড়ের বাঁকড়ির বাড়িতে যান সওকাত।

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৪
Share:

রেজ্জাকের বাড়িতে আলাপচারিতায় বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র।

বয়সের ভারে অসুস্থ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। খাওয়ানো থেকে শুরু করে তাঁর সমস্ত কাজ করে দিতে হয়। অসুস্থতার কারণেই ২০২১ সালে রাজনীতির ময়দান থেকে অবসর নেন।

Advertisement

এ দিকে, আইএসএফের দাপটের মুখে ভাঙড়কে ‘পুনরুদ্ধার’ করতে দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া সেই নেতারই দ্বারস্থ হলেন সওকাত মোল্লা।

সম্প্রতি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লাকে ভাঙড় বিধানসভার পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। মঙ্গলবার সকালে রেজ্জাকের ভাঙড়ের বাঁকড়ির বাড়িতে যান সওকাত। সঙ্গে ছিলেন ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লা, তৃণমূল নেতা সাত্তার মোল্লা। সওকাত ভাঙড়ের সার্বিক পরিস্থিতি, রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রেজ্জাকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। পরামর্শও নেন বলে দলের একটি সূত্রের খবর। সওকাত এ দিন রেজ্জাকের বাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন। নানা ধরনের ফলমূল নিয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গে।

Advertisement

১৯৭২ সালে ভাঙড় বিধানসভা থেকে সিপিএমের টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। নিজেকে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন ‘চাষার ব্যাটা’ বলে। ১৯৭৭ সালে ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হন রেজ্জাক। বামফ্রন্টের ভূমি সংস্কার দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন দীর্ঘ দিন।

সে সময়ে রেজ্জাকের হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ সওকাতের। সে সময়ে রেজ্জাক মোল্লার ‘দুই হাত’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন সওকাত মোল্লা ও সাত্তার মোল্লা।

রাজ্যে পালাবদলের পরে সওকাত তৃণমূলে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে রেজ্জাকও সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসেন। ভাঙড় বিধানসভা থেকে জিতে বিধায়ক ও মন্ত্রী হন।

২০২১ সালে ভাঙড় বিধানসভা আসনটি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। জয়ী হন আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকী। রাজনৈতিক ‘গুরু’ রেজ্জাক মোল্লার ছেড়ে আসা ভাঙড় কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব এখন তাঁরই এক সময়ের ‘ভাবশিষ্য’ সওকাতের উপরে বর্তেছে।

এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সংবাদের শিরোনামে। এর আগে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী, ভাঙড় বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দায়িত্ব পাওয়ার পরে আরাবুল, কাইজার, বাদল, বাহারুল, রহিমদের এক করতে পারেননি। রেজ্জাক মোল্লাও এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন।

রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরে নিঃসঙ্গ রেজ্জাক মোল্লা ঘনিষ্ঠ মহলে বহু বার বলেছেন, সিপিএমের লোকজন তাঁর অসুস্থতার খবর নিলেও বর্তমান শাসকদলের কেউ খবর রাখে না। দীর্ঘ দিন বাদে সওকাত রেজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ায় আপ্লুত বর্ষীয়ান নেতা। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রেজ্জাক এ দিন বলেছেন, ভাঙড় পুনরুদ্ধারের সব রকম দক্ষতা সওকাতের আছে। সকলকে এক ছাতার তলায় এনে ‘কিছু করে দেখানোর’ ক্ষমতা আছে। তিনি এক জন ‘যোগ্য নেতা।’

সওকাত পরে বলেন, ‘‘রেজ্জাক মোল্লার মতো এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সারা দেশে বিরল। এই বয়সেও ওঁর স্মৃতিশক্তি, রাজনৈতিক জ্ঞান সব কিছু প্রখর। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আগামী দিনে তাঁর পরামর্শ কাজে লাগবে।’’

তবে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ভাঙড়ে তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। তাই তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন। তবে এতেও কোনও লাভ হবে না। ভাঙড়ে অধিকাংশ তৃণমূল নেতৃত্ব দুর্নীতিগ্রস্ত। মানুষ তাঁদের বর্জন করেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement