ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন ধাক্কা খায় অভাবের সংসারে

গত ৪-৫ বছর থেকেই ফুটবল প্র্যাকটিস করছে সন্ধ্যা মাইতি। ২০১৭ সালে তাকে ফুটবলের জাতীয় শিবিরে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানাল। কিছু দিনের মধ্যেই জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার কথা।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

সাগর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৫
Share:

অনুশীলন: সুন্দরবন কাপে খেলতে এসে সন্ধ্যা আর গায়ত্রী। নিজস্ব চিত্র

ছোট্ট মুদির দোকানের ভরসায় চলে তেরো জনের সংসার। তারই মধ্যে লড়াই করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সন্ধ্যা। গত নভেম্বরে বাংলার হয়ে ওড়িশায় অনূর্ধ্ব ১৯ ফুটবল দলে সাগরের স্ট্রাইকার হিসাবে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে জাতীয় শিবিরে। তারপরেও কোথাও কোনও সাহায্যের আশ্বাস নেই। এ দিকে মেয়ের কেরিয়ার টানতে হিমসিম খাচ্ছেন বাবা। কাকদ্বীপে সুন্দরবন কাপ খেলতে এসে সন্ধ্যা এবং তার সঙ্গী খেলোয়াড়েরা জানিয়েছে তাদের নানা অসুবিধার কথা।

Advertisement

গত ৪-৫ বছর থেকেই ফুটবল প্র্যাকটিস করছে সন্ধ্যা মাইতি। ২০১৭ সালে তাকে ফুটবলের জাতীয় শিবিরে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানাল। কিছু দিনের মধ্যেই জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার কথা। ধ্বসপাড়া-সুমতিনগর ২ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হারাধনপুরে নিজেদের ছোট বাড়ি। দুই কাকার পরিবার মিলিয়ে তেরোজন সদস্য। বাবা সুশান্তবাবুর মৃত্যুঞ্জয়নগরে একটি মুদির দোকান আছে। তা থেকেই সংসার, মেয়ের পড়াশোনা এবং খেলার খরচ টানা। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘জুতো, খেলার সামগ্রী, ভাল খাবার দেওয়ার জন্য অনেকটাই কষ্ট করতে হচ্ছে। কিছু টাকাও ধার করছি।’’

কয়লাপাড়া এসডি হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সন্ধ্যাকে সাগরে এক ডাকে সকলেই চেনেন। অনুষ্ঠান বা প্রদর্শনী ম্যাচে গেলে এককালীন কিছু টাকা মেলে। ব্যস! তারপর সারা বছর প্র্যাকটিসের খরচ জোগাতে হয় পরিবারকেই। সন্ধ্যার কথায়, ‘‘জাতীয় দলেও ভাল ভাবে খেলতে চাই। তার আগে কয়েক মাস কলকাতায় ভাল কোচিং পেতে চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে প্র্যাকটিস করার মতো টাকা বাবার নেই।’’ কিছু দিন আগেও একটি ক্লাবে সুযোগ পেয়েছিল সন্ধ্যা। সারা দিন প্র্যাকটিসের পরে কলকাতায় থাকার জায়গার অভাব রয়েছে বলে যেতে পারেনি। সন্ধ্যার কথায়, ‘‘বাংলার হয়ে খেলেও সরকারি সুযোগ পাচ্ছি না।’’ বাংলা দলে খেললে কলকাতায় থাকা-খাওয়া এবং প্র্যাকটিসের সুযোগ মেলে এমনিতেই। সে সব ওই মেয়েটি পায়নি বলেই দাবি তার। সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘মেয়েটির মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। আমি কিছুটা আর্থিক সাহায্য করি। কলকাতায় থেকে অনুশীলনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যায় কিনা, দেখছি।’’

Advertisement

সন্ধ্যার মতো আরও এক উঠতি ফুটবলার গায়ত্রী হাঁসদা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হয়ে স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৭ দলে খেলেছে। সে-ও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সাগরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় একজন ভাল কোচ পেলে আরও কয়েকজন মেয়ে ফুটবলে উন্নতি করতে পারে।

সন্ধ্যা, গায়ত্রী ছাড়াও আরও কয়েকজন সম্ভাবনাময় মহিলা ফুটবলার খাসরামকর রামকরচর আদিবাসী যুবক সঙ্ঘের হয়ে অনুশীলন করে। ওই ক্লাবের সম্পাদক কানাই হেমব্রম বলেন, ‘‘কলকাতার জাতীয় ফুটবলার অনিন্দিতা সর্দার সপ্তাহে কয়েক দিন আসতেন। কিন্তু আমরা খরচ টানতে পারলাম না। ক্লাবের স্থানীয় কোচরাই এখন মেয়েদের শেখাচ্ছেন।’’ সারা বছরই এই ক্লাব উঠতি ফুটবলারদের তুলে আনতে চেষ্টা করে। যুবকল্যাণ দফতর থেকে পাওয়া টাকায় ঘর তৈরি হয়েছে, খেলার সামগ্রীও কেনা হয়েছে। সাগর থানা প্রতি বছর একটি করে ফুটবল দেয়। খাসরামকরে ওই ক্লাবের মাঠ সংস্কার করে একটি ফুটবল অ্যাকাডেমি করার দাবি তুলছেন আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement