বিভ্রান্তি: বসিরহাটে পোস্ট অফিসের সামনে মানুষের ঢল। নিজস্ব চিত্র
ডাকঘরের সামনে রাত জেগে লাইন। বচসা, ধাক্কাধাক্কি, ছোটাছুটি। লাইন রাখার বিনিময়ে টাকা নেওয়া।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পে নির্দিষ্ট ফর্ম জমা দিলেই মিলবে ২ লক্ষ টাকা, এই গুজবের জেরে শুক্রবার দিনভর উত্তাল থাকল বসিরহাট। মাইক হাতে রাস্তায় নামতে হল পুলিশকে। নোটিস দিয়ে বলা হল, ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পের জন্য বাজারে যে ফর্ম বিক্রি হচ্ছে সেটি ভুয়ো। তবে তাতেও কাজ হল না বললেই চলে। ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল লাইন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে স্বরূপনগর সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পে ফর্ম জমা দিলেই ২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাওয়ার গুজব হাওয়ায় ভাসছে। বলা হচ্ছে, ফর্ম পূরণ করে স্পিড পোস্ট করে দিল্লিতে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে পারলেই ২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। গত কয়েক দিন ধরেই বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন ডাকঘরের সামনে লাইন বাড়ছিল। শুক্রবারের ভিড় আগের সব দিনকে ছাপিয়ে যায়। এ দিন বসিরহাট প্রধান ডাকঘর-সহ মহকুমার বিভিন্ন ডাকঘরের সামনে কয়েক হাজার মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে যান।
সকাল ৮টা নাগাদ স্বরূপনগরের ডাকঘরের সামনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে সাপের মতো এঁকেবেঁকে লাইন গিয়েছে। লাইনের বেশিরভাগই মহিলা। তাঁদের মধ্যে খালেদা খাতুন, কল্পনা মণ্ডলদের দাবি, ‘‘কয়েক দিন ধরেই শুনছি, ২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে ফর্ম ফিলআপ করলে। দেরি হলে যদি টাকা না পাই, তাই রাত ১টা নাগাদ লাইন দিয়েছি।’’ স্বরূপনগরের বিথারি গ্রামের বাসিন্দা কমল সামন্ত, রমেন বাছাড়, খালেক গাজিরা জানান, এক থেকে পাঁচ টাকা দামে ওই প্রকল্পের ফর্ম বিক্রি হচ্ছে। ফর্মের সঙ্গে মহিলা ও তার বাবা-মার আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ভোটার কার্ড ও স্কুল শংসাপত্রের ফটোকপি দিয়ে স্পি়ড পোস্ট কিংবা রেজিস্ট্রি করে দিল্লি পাঠাতে বলা হয়েছে তাঁদের।
লাইনে দাঁড়ানো কয়েক হাজার মানুষ ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করলেও ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোনও তথ্য নেই বসিরহাটের এসডিপিও নীতেশ ঢালির কাছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পের আওতায় ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার বিষয়ে কিছুই শুনিনি। বিষয়টি পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে।’’ বসিরহাটের প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার গৌতম নন্দী জানান, তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন কোনও প্রকল্পের ‘সার্কুলার’ আসেনি যাতে টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে জানানো হয়েছে। গুজব ছড়ানোর পিছনে কারা রয়েছে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
কিন্তু প্রশাসনিক কর্তারা এই কথা বললেও শুনছে কে? শুক্রবার বেলা বাড়তেই দেখা যায়, অনেকে ডাকঘরের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পথে নামে বসিরহাট থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে আসেন বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত, পুরপ্রধান তপন সরকার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইক প্রচার করে বলা হয়, ওই প্রকল্পে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার বিষয়টি ভুয়ো।
বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটেও ওই প্রকল্পে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার তথ্য পাইনি।’’ তাঁর দাবি, উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গাতেও এই ধরনের গুজব ছড়িয়েছে। এর কোনও ভিত্তি নেই।