ভাঙাচোরা রাস্তায় এ ভাবেই চলছে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মথুরাপুর-২ ব্লকে রায়দিঘি বাজার থেকে বোলের বাজার ১৬ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় ১৪ কিলোমিটার অংশই বেহাল। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বেহাল ওই রাস্তায় গাড়ি চালাতে নাকাল হচ্ছেন চালকেরা। রাস্তাটি সংস্কারের দাবি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অবরোধ-বিক্ষোভ করলেও সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়েনি প্রশাসনের তরফে।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে জেলা পরিষদ থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের টাকায় ওই পিচ রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। রাস্তাটি চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী পরিবহণের জন্য চালু হয় ২৪টি গাড়ি (ম্যাজিক, ট্রেকার) ছাড়াও বেশ কিছু অটো, মোটরভ্যান চলাচল শুরু করে। কিন্তু কয়েক বছর কাটতেই দিনে দিনে পিচ উঠে গিয়ে গর্তে ভরে যায়। তারপর থেকে জোড়াতালি দিয়ে কয়েকবার সংস্কার হলেও পাকাপাকি ভাবে রাস্তা মেরামত হয়নি। অথচ এখান দিয়ে চলাচল করেন মথুরাপুর-২ ব্লকের নন্দকুমারপুর, কুমড়োপাড়া, রায়দিঘি পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। এ ছাড়াও, পাথরপ্রতিমা ব্লকের কুয়েমুড়ি, কেদারপুর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর পঞ্চায়েতের এলাকা থেকেও বহু মানুষ যাতায়াত করেন এই রাস্তা ধরে। কারণ, বোলের বাজারের পাশেই মণি নদীর উল্টো দিকে পাথরপ্রতিমা ব্লকের ওই পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে। পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘি ব্লকের বাসিন্দাদের মণিনদী পারাপারের জন্য ওই নদীর উপর সেতু নির্মাণ হয়েছে। ফলে দুই এলাকার বাসিন্দারা গাড়িতে করে এই রাস্তা ধরে যাতায়াত করতে পারেন। গাড়িতে করে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে, অফিস-কাছারি বা স্কুল-কলেজে যেতে-আসতে পারেন বাসিন্দারা। রায়দিঘি থেকে বাসে ডায়মন্ড হারবার, কলকাতায় যাতায়াতের সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু রাস্তা বেহাল হওয়ায় ওই দুই ব্লকের বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। মাস কয়েক আগে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে কাছারি মোড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার উপর কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন। কিন্তু ব্লক প্রশাসনের আশ্বাসের পরেও সংস্কার শুরু হয়নি। ফের দিন কয়েকের মধ্যে রাস্তা আটকে আন্দোলন শুরু করার হুমকি দিয়েছেন ওই কুমড়োপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। কুমড়োপাড়া এলাকার বাসিন্দা বৈদ্যনাথ মণ্ডল, দেবাশিস হালদারদের অভিযোগ, এই রাস্তায় এমনিতেই যাত্রীর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট কম। রাস্তার হাল খারাপ হওয়ার ফলে সন্ধের পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। ফলে বড় বড় খানাখন্দে ভরা রাস্তায় গাড়ি বের করতে চান না চালকেরা। রাতে কোনও মুমূর্ষ রোগীকে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলেও দুর্ভোগের শেষ থাকে না। রোগীর জীবন-মরণ সমস্যা হতে পারে।
খানাখন্দে ভরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে তাঁদের। ওই রুটে চলাচলকারী এক ট্রেকার চালক রমেন মণ্ডল জানালেন, বেহাল রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে যন্ত্রাংশ খারাপ হচ্ছে। তার উপরে গাডড়ি চলছে ঢিমে গতিতে। সে জন্য আবার যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বচসায় জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। এ ভাবে বেশি দিন চললে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের পীযূষকান্তি বারিক। তিনি বলেন, ‘‘ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদে জানানো হয়েছিল। দিন কয়েক আগে সংস্কারের জন্য অনুমোদন মিলেছে।’’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, ‘‘ওই রাস্তার ১১ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে। খুব শীঘ্রই টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু করা হবে।