হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনা কুমোরপাড়ার ব্যস্ততায় কোথাও যেন তাল কেটেছে। অন্য বছরের তুলনায় প্রতিমার বায়নার সংখ্যা এ বার সামান্য হলেও কম। অনেকে আবার বায়না দিলেও প্রতিমার বাজেট কমিয়েছেন। জেলার কয়েকটি কুমোরটুলি পাড়ায় ঘুরে চোখে পড়ল এমনই কিছু ছবি।
কেন এই অবস্থা?
প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার প্রতিমা শিল্পীরা এলাকার চাষের জমির মাটি দিয়েই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। পরে হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে গঙ্গার মাটি এনে প্রলেপ দেওয়া হয় প্রতিমায়। কিন্তু এ বার চাষের জমিতে এখনও জল জমে থাকায় মাটির দাম বেড়েছে। এ ছাড়াও, বেড়েছে প্রতিমা তৈরির অন্যান্য উপকরণের দাম।
বনগাঁ শহরের শিমুলতলার বাসিন্দা প্রতিমা শিল্পী সিন্টু ভট্টাচার্য জানান, গত বছর ৬ কুইন্ট্যাল গঙ্গার মাটির দাম ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি বছরে ওই একই পরিমাণ মাটি কিনতে দিতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। গত বছর একটি বাঁশের নাম ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। এ বার সেটি বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা।
সিন্টুবাবু বলেন, ‘‘এ বার বৃষ্টির জন্য কিছু চাষের জমিতে এখনও জল জমে রয়েছে। তাই বেশি দাম দিয়ে মাটি কিনতে হয়েছে।’’ সিন্টুবাবু জানান, তিনি গত বছর ৬০টি প্রতিমা করলেও এ বার করছেন ৪০টি।
বনগাঁর গোবরাপুর এলাকার প্রতিমা শিল্পী ভগীরথ সরকার জানান, তিনি গত বছর ২১টি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এ বার করছেন ১৩টি প্রতিমা। ভগীরথবাবু বলেন, ‘‘আমি গত বছর ৯০ টাকা দিয়ে এক ভ্যান চাষের জমির মাটি কিনেছিলাম। কিন্তু এ বার সেই মাটি কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা দিয়ে। গত বছর যে বাঁশ ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম, এ বার সেটি ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও, খড় ও সুতোর দাম বেড়ে গিয়েছে।’’
ভাগীরথবাবু জানান, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়লেও পুজো উদ্যোক্তারা বাজেট বাড়াতে রাজি হচ্ছেন না। গত বছরের দামেই প্রতিমা চাইছেন। একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন বনগাঁর শিল্পী কৃষ্ণ পাল। এ বার তিনি ১৭টি প্রতিমা তৈরি করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঋণ নিয়ে প্রতিমা তৈরি করি। লাভ খুবই কম হয়। উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।’’
উপকরণের দাম বৃদ্ধির সঙ্গেই রয়েছে ডেঙ্গির আতঙ্ক। মশা থেকে বাঁচতে কুমোরটুলি পাড়ায় রাত জেগে কাজ প্রায় বন্ধ।
প্রতিমা শিল্পীদের এ বার চিন্তার শেষ নেই।