বাইগাছিতে ওএনজিসির প্রকল্প এলাকা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
বাণিজ্যিক ভাবে পুরোদমে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন দ্রুত শুরু করুক ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ, চাইছেন অশোকনগরের বাসিন্দারা। তাঁদের আশা, বাণিজ্যিক ভাবে উত্তোলন শুরু হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে। অনুসারি ব্যবসাও ভাল হবে।
উত্তর ২৪ পরগনা অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার বাইগাছি এলাকায় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে ওএনজিসি। ২০২০ সালে তৎকালীন তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বাইগাছি এলাকায় প্রকল্প দেখতে আসেন। কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন। ২০২১ সাল থেকে বাইগাছি এলাকার প্রকল্প থেকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের কাজ চলছে।
বাইগাছিতে তেল প্রকল্পে কাজের আশায় রয়েছেন স্থানীয় মানুষ। বাইগাছিতে প্রকল্প এলাকার কাছে চায়ের দোকান মহাদেব দাসের। দোকানে চা-বিস্কুট-ডিম টোস্ট-সহ বিভিন্ন খাবার জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখানে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর কিছুদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ঘুরতে আসতেন। বেচাকেনা ভালই হত। এখন মানুষের আনাগোনা কমেছে। বিক্রিবাটাও কম। আমরা চাই, পুরোদমে তেল ও গ্যাসের বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হোক। তা হলে ব্যবসা বাড়বে। ইচ্ছা আছে, তখন ভাতের হোটেল খুলব।’’
অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘বাইগাছি এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন পুরোদমে শুরু হয়নি। ওই কাজ শুরু হলে স্থানীয় মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ।’’
ওএনজিসি-র এক আধিকারিক জানান, সীমিত ভাবে কিছু বাণিজ্যিক উত্তোলন হচ্ছে। স্থানীয় কিছু কর্মসংস্থানও হয়েছে। আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।
অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনও সে ভাবে হয়নি। কয়েক মাস কিছু মানুষ অস্থায়ী ভাবে কাজ করেছিলেন। আমরা আশাবাদী, বাণিজ্যিক উত্তোলন পুরোমাত্রায় শুরু হলে এলাকার মানুষ কাজ পাবেন।’’
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বাইগাছি এলাকায় ৪ একক জমির উপরে প্রকল্প চলছে। প্রয়োজন আরও ১২ একক জমির। জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, আরও মেশিন জড়ো করা হচ্ছে। আরও কূপ খননের কাজ চলছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক সমীক্ষার পরে মনে করা হচ্ছে, স্থানীয় ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের দৌলতপুর এলাকাতেও তেল ও গ্যাসের ভান্ডার রয়েছে। কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়েছিল। দৌলতপুর এলাকায় কাজের জন্য স্থানীয় ১৮ জন মানুষকে অস্থায়ী কাজ দেওয়া হয়েছিল। মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। তাঁরা ৪ মাস কাজ করেছিলেন। কিছুদিন আগে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
চণ্ডী পাইক নামে এক যুবক বলেন, ‘‘খেতমজুরি করতাম। প্রকল্পে কাজ করেছি চার মাস। বাড়িতে দুই মেয়ে। ভাল ভাবে সংসার চলে যাচ্ছিল। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আবার খেতমজুরির কাজে ফিরে গিয়েছি। আমরা চাই, বাণিজ্যিক ভাবে এখানে তেল ও গ্যাস উত্তোলন হোক। আমাদের কাজ দেওয়া হোক।’’
যে চার মাস দৌলতপুর এলাকায় কাজ হয়েছিল, তখন বেশ কিছু দোকানপাট বসেছিল। সারজিনা বিবি দোকান দিয়েছিলেন। চা-পান-বিড়ির পাশাপাশি ভাত রান্না হত। তিনি বলেন, ‘‘দিনে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হত। ভালই চলছিল। এখন কিছুদিন কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন দিনে ১০০ টাকারও বিক্রি হচ্ছে না। আমরা চাই, কাজ ফের শুরু করুন ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ।’’ দৌলতপুরে প্রায় ১৫ বিঘে জমিতে খননের কাজ চলছিল। চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন। জমিদাতা চাষি বিনোদবিহারী পাল বলেন, ‘‘আমি দু’বিঘে ৩১ শতক জমি দিয়েছি। ওএনজিসি চুক্তি করেছে, এক বিঘের জন্য বছরে ৮০,০০০ টাকা করে দেবে। তেল পাওয়া না গেলে কর্তৃপক্ষ জমি ফের চাষযোগ্য করে ফেরত দেবেন। তেল পাওয়া গেলে ন্যায্যমূল্যে জমি কিনে নেবেন। আমরা জমি দিতে প্রস্তুত।’’
ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, ‘‘দৌলতপুর থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস তোলা হয়েছে। পুংলিয়া এলাকায় তেলের সন্ধানে অনুসন্ধান চলছে। জমি পেতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিচ্ছেন। তবে কর্মসংস্থান সে ভাবে এখনও হয়নি স্থানীয় মানুষের।’’
বিধায়কের কথায়, ‘‘ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্রেড ডি এবং গ্রেড সি পদে প্রায় ৫ হাজার স্থানীয় মানুষকে কাজ দেওয়া হবে। আমার বিধায়ক কার্যালয়ে কাজের জন্য হাজারখানেক আবেদন জমা পড়েছে। বাণিজ্যিক উত্তোলন পুরোদমে শুরু হলেই কাজ মিলবে।’’