লাইন: ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছেন অনেকে। হাবড়া ১ ব্লক অফিসে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
কেউ এসেছিলেন বাচ্চা কোলে, কেউ দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসেছেন। আবার ছাতা নেই বলে আদুর মাথায় লাইনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছেন। বনগাঁ, বাগদা, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি— সর্বত্রই একই ছবি। সকাল থেকে লাইন পড়ল ব্লক অফিসে। প্রায় সকলেরই অভিযোগ, আবেদন করেও আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা। তাই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। প্রশাসনের বক্তব্য, পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য অনেকের আবেদন বাতিল হয়েছে।
সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা ব্লক অফিসে আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছিলেন। অনেকেই জানালেন, আমপানের পরে তাঁরা নিজেদের পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা দিয়েছিলেন। অনেকেই বলছেন, “আমরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও টাকা পাইনি। অথচ পাকা দোতলা বাড়ি, ঝড়ে তেমন ক্ষতি হয়নি, তাঁরা টাকা পেয়ে গিয়েছেন।”
বনগাঁ ব্লকে ছাতা মাথায় দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আমিনা বিবি। তাঁর কথায়, “গাছের ডাল ভেঙে ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আগে একবার আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা পাইনি। তাই ফের আবেদন করতে এসেছি।” একই অভিজ্ঞতা আকলিমা বিবিরও। তিনি বলেন, “ঝড়ে ঘরের টালি উড়ে গিয়েছিল। আকাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু টাকা পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন টাকা দেবেন, তাই আবার আবেদন করলাম।” একই অভিযোগ পরীক্ষিত অধিকারীরও।
আমপানের টাকা বিলির শুরু থেকে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ঘেরাও, পথ অবরোধ হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যাঁরা টাকা পেয়েছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হয়। অভিযোগ, কয়েকজন টাকা ফেরত দিলেও বেশিরভাগ এখনও টাকা ফেরত দেননি। কিন্তু যাঁরা টাকা ফেরত দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও প্রশাসনিক পদক্ষেপ হয়েছে বলে জানা যায়নি।
নতুন করে আমপানের ক্ষতিপূরণে ফের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এত দিন পরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ না পেয়ে নিজেরাই বাড়িঘর সাধ্যমতো মেরামত করে নিয়েছেন। এখন আবেদন জমা পড়ার পরে ফের তদন্ত কী করে হবে যে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্তে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কাদের পাকা বাড়ি সেটা বোঝা যাবে। আর কাঁচা বাড়ি মেরামত করলেও বোঝা সম্ভব।’’
বৃহস্পতিবার বসিরহাটের বিভিন্ন ব্লকের ক্ষতিগ্রস্তেরা নিজেদের ব্লক অফিসে এসে আবেদনপত্র জমা করেন ড্রপবক্সে৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্র জমার কাজ। এ দিন স্বরূপনগর ব্লক অফিসে এসে অনেকেই আবেদনপত্র জমা দেন। গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের আবুল বাশার বলেন, “আগে দু’বার আবেদনপত্র জমা করার পরেও আর্থিক অনুদান পাইনি। পরিবার নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে পলিথিনের নীচে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি৷ আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে শুনে ফের এসেছি। জানি না এ বারও ক্ষতিপূরণ পাব কিনা।” হাসনাবাদ ব্লক অফিসের সামনে এ দিন মানুষের ভিড় ছিল সকাল থেকে। ড্রপবক্সেই আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। মিনাখাঁ, সন্দেশখালির দু’টি ব্লক, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে অবশ্য তেমন ভিড় দেখা যায়নি।