রোপণ: বনগাঁ-চাকদহ সড়কে। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার ধার দিয়ে লাগানো হয়েছে চারা গাছ। সেখানে পোস্টারে লেখা ‘দূষণমুক্ত জীবন চাও? গাছ লাগাও গাছ বাঁচাও।’
গত বছর থেকেই মানবাধিকার সংগঠন বনগাঁ শাখার পক্ষ থেকে বনগাঁ-চাকদহ সড়কের পাশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠনের তরফে আম, লম্বু, মেহেগিনি, রাধাচুড়া কৃষ্ণচুড়ার মতো বিভিন্ন গাছের চারা পোঁতা হয়েছে। রবিবার তাঁরা পলতা এলাকায় গাছের চারা লাগিয়েছেন। ওই কাজে গ্রামবাসীও এগিয়ে এসেছেন।
সংগঠনের সম্পাদক অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে গত বছর থেকে আমরা ওই সড়কের পাশে গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেছি। স্থানীয় মানুষ নিজে থেকেই ওই চারাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁরা গাছ লাগানোয় আমাদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন।’’ অজয়বাবুর দাবি, শুধু গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেই হবে না, চারা লাগানোও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
প্রশাসন ও স্থানীয় খববর, বছর সাতেক আগে শেষ হয়েছে বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। ওই সড়ক সম্প্রসারণের সময় কাটা হয়েছিল কয়েক হাজার প্রাচীন গাছ। কিন্তু আজও যে ক’টা গাছের চারা পোঁতার কথা ছিল। তা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য যে গাছগুলি কাটা হয়েছে। পরিবর্তে গাছের চারা ফের লাগিয়ে দেওয়ার কথা প্রশাসনের। কিন্তু তা হয়নি। পরিবেশ কর্মীদের মতে, পর্যাপ্ত গাছ না লাগানোর ফলে এলাকার পরিবেশের উপরেও প্রভাব পড়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এশিয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের আর্থিক ঋণের টাকায় বনগাঁ থেকে চাকদহ পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার রাস্তাটি সম্প্রসারণ হয়েছিল। তার ১৬ কিলোমিটার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে পড়ে। বাকিটা নদিয়া জেলার মধ্যে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলার রাস্তাটি সম্প্রসারণের জন্য ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার গাছ কাটা হয়েছিল। একটি কাটা গাছের পরিবর্তে পাঁচটি চারা লাগানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
জেলা পূর্ত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই রাস্তার পাশে গাছের চারা লাগানো হয়েছে। কিন্তু তার সঠিক হিসাবে এখন তাঁদের কাছে নেই। বাসিন্দারা জানান, কিছু গাছ লাগানো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ কিছু চারা মারাও গিয়েছে। যদিও পূর্ত দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, চারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পূর্ত দফতরের বারাসত ডিভিশন -২ নির্বাহী বাস্তুকার অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে আমি দায়িত্বে এসেছি। ওই সড়কে গাছের চারা পোঁতা হয়েছিল। কিন্তু সংখ্যাটা খোঁজ না নিয়ে বলা সম্ভব নয়।’’
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, প্রাচীন গাছগুলি রাস্তায় ছায়া দিত। শিরীষ গাছ রেন ট্রি হিসাবে কাজ করত। গাছের শিকড় মাটির গভীরে থাকায় ভূমিক্ষয় রোধ হতো।
প্রবীণ মানুষেরা জানান, গাছ নেই বলেই বোধ হয় বৃষ্টি কমে গিয়েছে এলাকায়। চিকিৎসক তথা এপিডিআরের বনগাঁ শাখার সহ সভাপতি বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘‘অক্সিজেনের অভাব হলে বিভিন্ন রোগ হয়। গাছ না লাগানো হলে আমাদের একদিন অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে ঘুরতে হবে।’’