Cyclone Amphan

আমপানের প্রভাব বাজারেও

আলু থেকে শুরু করে পটল-ঢেঁড়শ সবই অগ্নিমূল্য। পুষ্টির ঘাটতি মেটানো থেকে শুরু করে রসনাতৃপ্তির জন্য যে ডিম বা মুরগির মাংসই ভরসা নিম্ন থেকে মধ্যবিত্তদের, তা-ও আজ মহার্ঘ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ০৬:২৫
Share:

ঝড়ে ধরাশায়ী হয়েছিল বহু পেঁপে গাছ। এখন বাজারে দাম বাড়ছে পেঁপের। বনগাঁর ছবি

ঘরবাড়ি, জমি-জিরেত তো গিয়েছেই, আপমানের জেরে এ বার ট্যাঁকে টান পড়ছে গৃহস্থের। ঘূর্ণিঝড়ে দুই ২৪ পরগনা-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় চাষ ভেসেছে। পাকা ধানের বেশিরভাগ ঘরে তোলা গেলেও বাঁচানো যায়নি আনাজ। সপ্তাহ দু’য়েক কাটতেই কাঁচা আনাজের জোগানে টান পড়েছে।

Advertisement

আলু থেকে শুরু করে পটল-ঢেঁড়শ সবই অগ্নিমূল্য। পুষ্টির ঘাটতি মেটানো থেকে শুরু করে রসনাতৃপ্তির জন্য যে ডিম বা মুরগির মাংসই ভরসা নিম্ন থেকে মধ্যবিত্তদের, তা-ও আজ মহার্ঘ। করোনা-কবলে যে মুরগির মাংস কোথাও কোথাও ৫০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছিল, তা আজ ৩০০ ছুঁইছুঁই।

কপাল পুড়েছে চাষিদেরও। লকডাউনের শুরুতে যানবাহনের সমস্যায় আনাজ সস্তায় বিকিয়েছিল। ঝড়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় বড়সড় লোকসানের ধাক্কা সইতে হচ্ছে তাঁদের। মূল্যবৃদ্ধির হার দুই জেলার সর্বত্র প্রায় একই। বনগাঁ থেকে বাসন্তী, কাকদ্বীপ থেকে বসিরহাট দামের ফারাক বিশেষ নেই।

Advertisement

আমপানে খেতে জল জমে যাওয়ায় চাষিরা এক সঙ্গে আনাজ বাজারে নিয়ে এসেছিলেন বলে দাম কম ছিল কয়েক দিন। ঝড়ের সঙ্গে সরাসরি ক্ষতির যোগ না থাকলেও আলু দামও ঊর্ধ্বমুখী। ঝড়ের আগে যে জ্যোতি আলু এক কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন কোথাও তা ২২ কোথাও ২৫ টাকা। বনগাঁ বাজারে পটল এখন ৪০-৫০ টাকা কেজি। বসিরহাটের বিভিন্ন বাজারেও দাম ৫০ টাকা। ঝড়ের আগে পটলের দাম ছিল এলাকা ভেদে ১৫-২০ টাকা কেজি।

একই অবস্থা ঢেঁড়শ-ঝিঙের দামেরও। আগে যে কাঁচা পেঁপে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় আবার পেঁপের দাম ৫০-৬০ টাকা। তার কারণ দুই ২৪ পরগনায় খেতে পেঁপে গাছের কোনও অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কার্যত নাগালের বাইরে শশা। ঝড়ের আগ যে শশা কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকায় বিকিয়েছে, এখন তা এলাকা ভেদে ৭০-৯০ টাকা।

লকডাউনে অনেকেই কর্মহীন, রোজগার কমেছে বহু মানুষের। এই অবস্থায় আলু-পটল কিনতেই পকেটে টান পড়ছে। কাঁকিনাড়ার পাইকারি আনাজ ব্যবসায়ী তাহির মহম্মদ বলেন, “বাইরে থেকে কিছু আনাজ আসছে। কিন্তু কম দামে কেনা আনাজ মওকা বুঝে অনেকেই চড়া দামে বেচছেন। ফলে দাম কমছে না।” বনগাঁর আনাজ বিক্রেতা নিমাই বিশ্বাস জানালেন, মানুষ আনাজ কিনছেন কম।

আগে এক কেজি মুরগির মাংসের দাম ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। এখন তা ট্রিপল সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। কোথাও ২৫০, তো কোথাও ২৭০ টাকায়। লকডাউনের প্রথম দিকে কিছুটা কালোবাজারি ছাড়া খামারের মুরগির ডিম প্রতি পিস ৪ টাকা ছিল। এখন পাঁচ টাকা। ডিম বেশিরভাগই আসে ভিন্ রাজ্য থেকে। ফলে তার দাম কেন বাড়ল, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে সেই জবাব মেলেনি। নৈহাটির ডিম ব্যবসায়ী রতন বিশ্বাস জানান, ডিমের পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে বলেই খুচরো বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। মুরগির মাংসের দাম নিয়ে ভাঙড়ের এক খামার মালিক জনাব আলি মোল্লা জানান, লকডাউনের শুরুতে করোনা-আতঙ্কে মানুষ মুরগির মাংস কিনছিলেন না বলে দাম তলানিতে নেমেছিল। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের জন্য নতুন করে মুরগি পালন করেননি। আবার ঝড়ের তাণ্ডবে প্রচুর খামার ভেঙে মুরগি মরেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে জোগান কম। ফলে দাম নাগাল ছাড়াচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement