নষ্ট: জলে ডুবে আছে বেগুনের চারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
হাসনাবাদ ব্লকের বরুহাট মহম্মদ ইসা গাজি কয়েক বিঘে জমিতে আমন ধান লাগিয়ে ছিলেন। খেতে ধান পেকে গিয়েছিল। ধান কাটবার সময়ও হয়েছিল। ভেবে ছিলেন কয়েক দিনে বাদেই ধান কাটতে শুরু করবেন।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ধাক্কায় ইসার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। শনিবার রাতের ঝড় ও বৃষ্টিতে খেতের ধান সব নুয়ে পড়েছে। খেতের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইসা বলছিলেন, ‘‘সব শেষ হয়ে গেল। চাষের খরচটাও উঠল না।’’
শুধু ইসাই নয় বুলবুলের ধাক্কায় উত্তর ২৪ পরগনার কয়েক লক্ষ চাষি আজ ক্ষতির সম্মুখীন। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জেলার ১ লক্ষ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে যার বেশির ভাগ। কৃষি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দফতরের উপ কৃষি-অধিকর্তা অরূপ দাস বলেন, ‘‘ওই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাতে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়েছিল। বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ২২ টি ব্লকের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ ও দেগঙ্গা ব্লকে। বসিরহাট ১ ও বসিরহাট ২ ব্লকের চাষে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলাতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। কোথাও খেতের ধান ঝড়ে নুয়ে পড়েছে, কোথাও ডগা ভেঙে ধান ঝরে পড়েছে। অনেক জায়গায় ধান খেত জলে ডুবে গিয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বিঘে আমন ধান চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। চাষিরা জানালেন, ঋণ নিয়ে তাঁরা চাষ করেছিলেন। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের চাষি সঞ্জয় পাত্র, গঙ্গা মণ্ডল বা হাসনাবাদের চাষি হায়দার সর্দার এখন পরবর্তী চাষের খরচ কোথা থেকে পাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
এখন জেলায় চলছে শীতকালীন আনাজ লাগানোর কাজ। বহু চাষি ইতিমধ্যেই বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলো, পালং, বেগুন লাগিয়েছিলেন। সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সর্ষে চাষেও। বনগাঁ ব্লকের ফকিরবাগান এলাকার চাষি সতীশ ব্যাপারী ১৮ কাটা জমিতে মটরশুটি লাগিয়ে ছিলেন। জল জমে সব শেষ। বনগাঁ ও বারাসত মহকুমার অনেক জায়গায় পেঁপে গাছও ভেঙে পড়েছে। কোথাও দেখা গেল, কলা খেতে জল জমে রয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের কর্তরা বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে গিয়েছিলেন রবিবার। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। চাষিরা তাঁদের কাছে সরকারি সাহায্যের আবেদন করেছেন। বসিরহাট মহকুমাতে মূলত ধান চাষের ক্ষতি বেশি হয়েছে। হাসবাবাদ ব্লকে ধানের পাশাপাশি আনাজের ক্ষতি হয়েছে। বনগাঁ মহকুমায় আনাজের চাষ বেশি হয়। ফলে এখানে আনাজের ক্ষতিও হয়েছে বেশি। বনগাঁর এক চাষি সারারাত ঘুমাতে পারেননি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিজে তিনি খেত দেখে যাচ্ছিলেন। ধান খেতে জলে ডুবে গিয়েছে।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীতকালীন আনাজের ক্ষতি হওয়াতে এবার শীতের শুরুতে বাজারে আনাজের জোগান কম হওয়ার সম্ভাবনা। ফলে আনাজের দাম বাড়াতে চলেছে। যদিও কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন কৃষি কর্তারা। অরূপ বলেন, ‘‘বুলবুলের দাপটে শীতের আনাজ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও একশো শতাংশ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তা ছাড়া এখনও শীতের আনাজ লাগানোর সময় পেরিয়ে যায়নি। চাষিরা শীতের আনাজ লাগাতে পারবেন। ’’
তবে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সামলে চাষিরা কতটা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ফের আনাজ চাষ করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।