n আলোকের ঝরনাধারা: গঙ্গাসাগর মেলার আগে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে কপিলমুনির আশ্রম ও সংলগ্ন এলাকা। ছবি সৌজন্য: জেলা প্রশাসন।
আর ক’দিন পরেই শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। এই মুহূর্তে জোরকদমে চলছে মেলার প্রস্তুতির কাজ। করোনা পরিস্থিতিতে মেলায় আসা পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার মেলার কাজের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার সঙ্গে মেলা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে মেলা এলাকা পরিদর্শন করেন। বিধায়ক বলেন, “মেলার পরিকাঠামোর কাজ কতটা এগিয়েছে তা দেখতে মন্ত্রী এসে ছিলেন। বিদ্যুৎ লাইন-সহ অন্যান্য কাজ প্রায় শেষের পথে।”
কুম্ভ মেলার পরে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা ধরা হয় গঙ্গাসাগর মেলাকে। কপিলমুনি দর্শনের জন্য প্রতিবছর সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ঢল নামে সাগরে। এবার করোনা পরিস্থিতির জন্য অতিরিক্ত কিছু সতর্কতা নিচ্ছে প্রশাসন। পুণ্যার্থীদের মধ্যে দূরত্ববিধি বজায় রাখতে এবং কাউকে যাতে বাইরে রাত কাটাতে না হয়, সে কথা মাথায় রেখে এ বার বড় ছাউনির তাঁবুর সংখ্যা পাঁচটি বাড়ানো হয়েছে। গতবছর পাঁচটি তাঁবু ছিল। এবার দশটি তাঁবু তৈরি করা হচ্ছে। মেলা চত্বরের আশেপাশে ওই তাঁবু সংলগ্ন অতিরিক্ত শৌচালয় করা হয়েছে। পাশাপাশি, ১০ লক্ষ মাস্ক মজুত রাখা হচ্ছে। তা সাগরে ঢোকার আগে বিভিন্ন স্থানে বিলি করা হবে। রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়া ব্যবহৃত মাস্ক দ্রুত সরিয়ে ফেলে তা পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছে প্রশাসন। এর জন্যও অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
আসা-যাওয়ার পথে প্রতিটি পুণ্যার্থীর স্যানিটাইজ় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা এবং থার্মাল স্ক্রিনিং করা হবে। কোনও ব্যক্তির যদি করোনা উপসর্গ দেখা যায়, তার জন্য মেলার কাছেই ১০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল করা হয়েছে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে দ্রুত রেফার করার জন্য থাকছে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা।
রোগীদের কলকাতা বা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য গত বছর থেকে চালু হওয়ায় ৩টি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সও থাকছে। সাগর দ্বীপে পূণ্যার্থীদের থাকার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ফ্লাড শেল্টার, গেস্ট হাউজ় ও কমিউনিটি হল। সেই সমস্ত ভবনগুলিও স্যানিটাইজ় করা হবে। গত বছরের মতো এবারেও সাগর মেলাকে প্লাস্টিক বর্জিত জ়োন করা হয়েছে। কেউ প্লাস্টিকের ব্যাগ, জলের বোতল বা অন্য কিছু নিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
মেলায় ঢোকার আগেই নজরে পড়লে তা নিয়ে নেওয়া হবে। পরিবর্তে তাঁদের হাতে কাপড়ের ব্যাগ ধরিয়ে দেওয়া হবে। এই দায়িত্ব থাকছে সাগর পঞ্চায়েত সমিতির উপর। ইতিমধ্যেই তারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে প্রায় ২ লক্ষ কাপড়ের ব্যাগ তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। মেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১২০০ শৌচালয় থাকছে।
এছাড়া মেলা চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ৫ হাজার
কর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, “ফি বছর বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতেই কপিলমুনির মন্দিরের সামনে জল জমে যেত। সেই সমস্যার সমাধানে নতুন করে নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে। সাগর মেলা সাজাতে এবারে আরও বেশি
করে আলো লাগানো হয়েছে। ১৪ জানুয়ারি শুরু হবে মেলা। মেলা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা আছে।”