তালিকা থেকে বাদ বহু নাম। প্রতীকী চিত্র।
২০১৮ সালের তালিকার এক তৃতীয়াংশ নামই বাদ গিয়েছে আবাস প্লাসের নতুন সংশোধিত তালিকায়। প্রাথমিক পর্যায়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৫৫ হাজার মানুষের নামে ঘরের অনুমোদন এসেছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এই সব উপভোক্তা পাকাবাড়ি তৈরির জন্য প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা করে পাবেন। বুধবার পর্যন্ত অবশ্য কারও অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আবাস যোজনার পুরনো তালিকায় নাম ছিল ২ লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষের। সাম্প্রতিক ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরে চূড়ায় তালিকায় নাম আছে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার মানুষের। বাদ গিয়েছে ৯৮ হাজার মানুষের নাম। যা পুরনো তালিকার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। বিরোধীদের দাবি, এত নাম বাদ যাওয়ায় বোঝাই যাচ্ছে, তালিকায় কতটা বেনোজল ছিল! নতুন তালিকাতেও তৃণমূলের নেতা, কর্মী, ঘনিষ্ঠদের অনেকের নাম ঢোকানো হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। প্রকৃত গরিব সকলে বাড়ির তালিকায় জায়গা পাননি বলেও তাঁদের দাবি।
তৃণমূলের অবশ্য দাবি, সরকারি কর্মীরা তালিকা তৈরির কাজ করেছেন। কোথাও গরমিল থাকলে তা শুধরে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নিয়ম-কানুনের জটিলতায় অনেক প্রকৃত গরিব মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন বলেও দাবি শাসকদলের নেতাদের।
সরকারি ভাবে আবাস যোজনার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার দাবি তুলেছে বিরোধীরা। সিপিএমের আশঙ্কা, তালিকায় এখনও অনেক বেনোজল থেকে যাওয়ায় তা প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আবাস যোজনার তালিকায় এখনও প্রচুর গরমিল আছে। অনেক পাকাবাড়ির মালিকের নাম থেকে গিয়েছে।’’
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দাবিতে জেলার বিডিও অফিসগুলিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সিপিএমের তরফে। প্রতিবাদ সভা হচ্ছে। বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হচ্ছে। মৃণাল বলেন, ‘‘জেলার বেশির ভাগ বিডিও অফিসে আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। শীঘ্রই তালিকা প্রকাশের দাবিতে জেলাশাসকের দফতরে অভিযান চালানো হবে।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, ভোটের আগে গ্রামের মানুষের বিক্ষোভের ভয়ে শাসকদল তালিকা সামনে আনছে না। বিজেপির জেলা নেতা তাপস মিত্র বলেন, ‘‘তালিকায় এখনও বহু ভুয়ো নাম আছে। শাসকদল আতঙ্কে আছে। তালিকা প্রকাশ্যে আনলে গণবিক্ষোভের আশঙ্কা করছে তারা। সে কারণেই তালিকা চেপে দেওয়া হচ্ছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসকেরা সমীক্ষা করে, খতিয়ে দেখার পরে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়নি। সিপিএম আগে এ সব কাজ করত বলে ওদের গাত্রদাহ হচ্ছে।’’ বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘ভোটের আগে ওদের হাতে কোনও বিষয় নেই আন্দোলন করার মতো। তাই এ সব কথা বলে বাজার গরম করতে চাইছে।’’
কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা কি সামনে আনা হবে না?
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘তালিকা চূড়ান্ত হলেও রাজ্য থেকে নির্দেশ না আসায় তা প্রকাশ্যে আনা যাচ্ছে না। নির্দেশ এলেই সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’ কেন আসছে না নির্দেশ? কবে আসতে পারে? এ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি ওই আধিকারিক।