তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে বাঁশের খাঁচা। নিজস্ব চিত্র
আমপানের পরে বর্ষা এল, তবুও জীর্ণ নদী বাঁধে এখনও মাটি পড়ল না। শুধু বাঁশের খাঁচা করা হল। এই গাফিলতির চিত্র হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর ও রূপমারি পঞ্চায়েতের তিনটি জায়গায় চোখে পড়ছে।
আমপানে ক্ষতি হয় বিশপুর ও রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমপানের রাতে বিশপুর পঞ্চায়েতের বায়লানি খেয়াঘাটের পাশ থেকে প্রায় ২৫০ মিটার ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। গ্রামবাসীরাই ত্রিপল, মাটি, খড় ইত্যাদি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। তবে বাঁধের মাটি ক্ষয়ে পাশের ঢালাই রাস্তার কাছে চলে এসেছে নদীর জল। সেই সঙ্গে রাস্তার নীচে বিভিন্ন জায়গায় মাটি ক্ষয়ে গর্ত হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফ থেকে বাঁধ মেরামতি করার জন্য বাঁধের পাশে বাঁশের খাঁচা করা হয়।
এরপরে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। এখনও সেই খাঁচায় একটুও মাটি পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিমল পাত্র, ধনঞ্জয় সর্দাররা বলেন, “আমরা আমপানে যে মাটি দিয়েছিলাম বাঁধ বাঁচাতে। সে সব ক্ষয়ে যাচ্ছে নদীর জলের তোড়ে। বৃহস্পতিবার নদীর জলস্তর বিপজ্জনক ভাবে বাড়ল। যা দেখে আমরা খুব আতঙ্কিত। জানি না কবে বাঁধে মাটি দেওয়া হবে।”
বিশপুর পঞ্চায়েতের ধরমবেড়িয়া গ্রামের ধরমবেড়িয়া স্লুইস গেটের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ মিটার নদী বাঁধের অবস্থাও আমপানের পর থেকে খারাপ। কোথাও কোথাও আমপানের পরে বাঁধ এমন সরু হয়ে গিয়েছে যে বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় মানুষের। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে আছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমপানের রাতে বাঁধ ছাপিয়ে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছিল। যা দেখে বাড়ির মহিলা, পুরুষ এমনকী বাচ্চারাও বাঁধ রক্ষা করতে বাঁধের উপরে রাতে কলা গাছ নিয়ে শুয়েছিল। সেই রাতে প্রশাসনের কোনও সাহায্য তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ। তবে আমপানের পরে বাঁধের জীর্ণ অবস্থা দেখে গৌড়েশ্বর নদীর প্রায় ৬০০ মিটার বাঁধের পাশে বাঁশের খাঁচা করা হয়। ওই পর্যন্তই। আর কাজ এগোয়নি। প্রায় একমাস হয়ে গেল খাঁচা করা রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ধ্রুব মণ্ডল, দেবব্রত মণ্ডলরা বলেন, “ভরা কটালে ভয় করছে। জানি না এ বার আর বাঁধ বাঁচানো যাবে কিনা। দ্রুত বাঁধ মেরামতি হোক, এটাই চাই।”
একই অবস্থা রূপমারি পঞ্চায়েতের কুমিরমারি খেয়াঘাটের পাশের ডাঁসা নদীর কয়েক'শো মিটার বাঁধের। আমপানের পরে নদী বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছিল। তারপরে মেরামত করা হয় কিছুটা বাঁধ। তবে এখনও বাঁধের অনেক অংশে শুধু বাঁশের খাঁচা করে রাখা হয়েছে। মাটি ফেলা হয়নি। যা নিয়ে এই ভরা কটালে আতঙ্কে স্থানীয় মানুষ।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সৌম্য ঘোষকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। বিশপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিত জানা বলেন, ‘‘দ্রুত মাটি ফেলার কাজ শুরু হবে।” রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সনাতন সর্দার বলেন, “বাঁধের পাশে মাটি নেই। তাই দেওয়া যায়নি। চেষ্টা করা হচ্ছে, দূর থেকে মাটি এনে দিতে।”