সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মূল্যায়ণে প্রাথমিক শিক্ষায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সেরার শিরোপা পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, পরিকাঠামো থেকে শিক্ষকের অভাব-সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রাথমিক স্কুলগুলি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার
school

Schools: বেহাল ক্লাসঘরে বাঁধা থাকে গরু

স্কুল সূত্রে খবর, ১৯৪২ সালে এই স্কুল স্থাপিত হয়। পুরনো ভবন ভেঙে আনুমানিক ২০০৮ সাল নাগাদ নতুন করে দুটি বড় ঘর তৈরি হয়।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:১৯
Share:

হতশ্রী: স্কুল ভবনের সামনে গরু বেঁধে রেখেছেন স্থানীয়েরা। নিজস্ব চিত্র।

পাকা দোতলা ভবনে মোট চারটি ঘর। তবে ব্যবহারযোগ্য ঘর একটি। গোটা ভবনের অবস্থা শোচনীয়। নীচ তলায় দুটি ঘর তৈরি করা হয়েছে বহু বছর আগেই। কিন্তু ঘরের দরজা, জানলায় পাল্লা বসানো হয়নি। প্লাস্টারও করা হয়নি দেওয়ালে। ফলে, ওই ঘরে কখনও ক্লাস হয়নি হলে দাবি স্থানীয়দের। বর্তমানে ওই ঘর গরু রাখার জন্য ব্যবহার করেন স্থানীয়েরা। উপরের ঘরদুটিতে প্লাস্টার হয়েছে, পাল্লাও বসেছে, কিন্তু বর্তমানে সেগুলিও ব্যবহারের উপযুক্ত নেই। একটি ঘরে কোনওরকমে ক্লাস চলে। পাশের আর একটি ভবনে একটি মাত্র ঘর রয়েছে। সেখানেই একসঙ্গে চারটি ক্লাস হয়। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের বসার জন্যও ওই ঘরটি ব্যবহার করা হয়। আবার মিড ডে মিলের খাদ্য সামগ্রী, স্কুলের আলমারি, বইপত্র ইত্যাদি রাখতেও ভরসা ওই একটিই ঘর। এমনই অবস্থা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের ভান্ডারখালি এফপি স্কুলের।

Advertisement

স্কুল সূত্রে খবর, ১৯৪২ সালে এই স্কুল স্থাপিত হয়। পুরনো ভবন ভেঙে আনুমানিক ২০০৮ সাল নাগাদ নতুন করে দুটি বড় ঘর তৈরি হয়। কিন্তু ঘরে প্লাস্টার করা হয়নি। এর বছরখানেক পর ওই দুটি ঘরের উপরে আরও দুটো ঘর তৈরি করা হয়। উপরতলার ঘর যদিও প্লাস্টার করা হয়েছিল। ২০১০ সাল নাগাদ ভবনের পাশে আরেকটি ঘর তৈরি করা হয়। বর্তমানে ওই ঘরটিতেই অধিকাংশ ক্লাস নেওয়া ও অন্যান্য অফিসের কাজে ব্যবহার করা হয়।

এদিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পুরনো ভবনের সামনে গরু বাঁধা। স্থানীয়েরা জানালেন, স্থানীয় একটি পরিবার স্কুলে নিয়মিত গরু বাঁধে। নীচ তলার দুটি ঘরের মধ্যে একটির মেঝে মাটির। সেই ঘরটি প্রায়ই গরু রাখার কাজে ব্যবহার করা হয় বলে জানালেন তাঁরা। ঘরের মধ্যে গরু রাখার বিভিন্ন চিহ্ন স্পষ্ট। প্লাস্টার না হওয়ায় স্কুলের নীচতলার ঘর দুটোর দেওয়ালে নোনা ধরে গিয়েছে। ইটের পিলারগুলো গোড়ার দিকে ক্ষয়ে গিয়েছে। দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে না রয়েছে রেলিং, না রয়েছে প্লাস্টার। সিঁড়ির ঘরের চাল আমপানের পর ভেঙে সিঁড়ির উপরই পড়ে রয়েছে। দোতলায় উঠে দেখা গেল একটি ঘরের মেঝে করা হয়েছিল, তবে বর্তমানে তা বেহাল। পাশের ঘরটি তুলনায় কিছুটা ভাল।

Advertisement

স্কুল সূত্রে খবর, বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৫৫ জন পড়ুয়া আছে। স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত চারটি ক্লাসের পড়ুয়ারা সকলেই বসে নতুন ভবনটির একমাত্র ক্লাসঘরটিতে। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের পুরনো ভবনের দোতালার অপেক্ষাকৃত ভাল ঘরটিতে ক্লাস করানো হয়।

প্রদীপ মণ্ডল নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘নীচের তালার দুটো ঘরেরই ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। প্লাস্টার না করায় তৈরি হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এই হাল হয়েছে। আমার দুই সন্তান এই স্কুলে পড়ে। বর্তমানে ভবনের বিপজ্জনক অবস্থা। তাই স্কুল খুললেও বাচ্চাদেরকে ওখানে পাঠাবো কি না বুঝতে পারছি না।’’

আর এক অভিভাবক মমতা মুন্ডা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল খুললে মেয়েকে পাঠালেও দুশ্চিন্তায় থাকব। ছোটরা যাতে সিঁড়িতে না ওঠে, পুরনো ভবনের কাছে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষকদের। না হলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’

বিদ্যালয়ের অন্যান্য পরিকাঠামোও নড়বড়ে। রান্নাঘরটিতে প্লাস্টার নেই, দেওয়ালে নোনা ধরেছে। একটি মালপত্র রাখার ঘর রয়েছে। সেটিও ব্যবহারের যোগ্য নেই। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের পৃথক শৌচাগার থাকলেও জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। একটি শৌচাগারের দরজা ভাঙা। তবে স্কুলে একটি পানীয় জলের প্রকল্প আছে।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিষেক রায় বলেন, ‘‘স্কুলের বর্তমান অবস্থার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। আমাদের অন্তত দুটো ক্লাস ঘর এবং একটি খাওয়ার ঘর করা দরকার।’’

স্থানীয়েরা জানান, এই স্কুলের কিছুটা দূরেই দুটো প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। স্কুল সংস্কার না হলে এখানকার পড়ুয়াদের সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া নতুন পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরাও এই স্কুলে ভর্তি করতে চাইবেন না।

হিঙ্গলগঞ্জ সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক মহম্মদ নিজামুদ্দিন বলেন, ‘‘স্কুল খোলার জন্য সংস্কার প্রয়োজন ঠিকই। সংস্কারের বরাদ্দ পেলে পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement