একই মঞ্চে দেবদাস-অশোক। নিজস্ব চিত্র ।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে পেট্রাপোলে কর্মসূচি হয়েছে সনাতনী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে। উদ্যোক্তা ছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া এবং বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদার। সোমবার দুপুরে পেট্রাপোল সীমান্তে আয়োজিত ওই কর্মসূচির মঞ্চে এক সঙ্গে দেখা মিলল বিজেপির সব পক্ষের। শেষ কবে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তা মনে করতে পারেন না বনগাঁ বিজেপির নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে, অশোকের সঙ্গে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের এক মঞ্চে থাকার দৃশ্য বহু দিন চোখে পড়েনি বলে জানাচ্ছেন দলের অনেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বনগাঁয় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। অশোকের সঙ্গে দেবদাসের দূরত্ব দলের অন্দরে অনেকের চোখে পড়েছে। গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই দূরত্ব বাড়তে থাকে। দলীয় প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের হয়ে দেবদাস এবং অশোককে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গিয়েছিল। দেবদাসের সঙ্গে অশোককে কোনও কর্মসূচিতে কার্যত এক সঙ্গে দেখাই যেত না। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদেও দেবদাস এবং অশোক বনগাঁ শহরে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করেছেন। কিছু দিন আগে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টা বাংলা বন্ধের দিন দেবদাসেরা রেল অবরোধ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই অশোক লোকজন নিয়ে রেল অবরোধ করেন। দেবদাসেরা আর সেই কর্মসূচিতে শামিলই হননি!
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অশোক সহ দলের অনেকেই চাইছেন না দেবদাস দলের সভাপতি থাকুন। দেবদাস এবং অশোকের অনুগামীরাও আড়াআড়ি বিভক্ত। অশোক ছিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। কিছু দিন আগে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সই করা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্যাডে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দেবদাস দলের অন্দরে শান্তনু-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
বিজেপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনের কাছাকাছি আসার সূত্রপাত হয় দিন কয়েক আগে, দেবদাসের ছেলের বৌভাতের অনুষ্ঠানে। সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন
অশোকও। এ দিন দেবদাস বলেন, ‘‘আমি সনাতনী এবং বিজেপি। আমার সঙ্গে অশোকের আগেও কোনও কোন্দল ছিল না। এখনও নেই। আমাদের লক্ষ্য ২০২৬ সালে রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করা।’’ অশোক পরে বলেন, ‘‘আমার বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে দেবদাস যাননি। আমি কিন্তু ওঁর ছেলের বৌভাতে গিয়েছি। এটা সামাজিকতা। আমরা সকলেই বিজেপি। এ দিন সকলে এক সঙ্গে থাকায় বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি কর্মীরা অক্সিজেন পেলেন।’’
যদিও বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটে অশোক যাতে টিকিট না পান, সেই বিরোধিতা ওদের দলে শুরু হয়ে গিয়েছে। উৎচ্ছৃঙ্খল একটা দল, গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার। কে বা কারা এক মঞ্চে থাকল, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’’