চোলাই কারবারিকে ধরতে গিয়ে বাগদার গ্রামে আক্রান্ত পুলিশ

গ্রামে রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের কারবার, বার বারই পুলিশের কাছে এমন খবর আসছিল। সোমবার রাতে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে দু’জন চোলাই কারবারিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু ধৃতদের কিছু আত্মীয় ও পড়শি পুলিশের উপরে চ়ড়াও হয়ে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে খানিক ধস্তাধস্তি হয়। জনতার আক্রমণে মাথা কেটে যায় এক পুলিশ কর্মীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগদা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০১:১৫
Share:

এই দোকান থেকেই বিক্রি হত চোলাই। ইনসেটে, ধৃত দুলাল। নিজস্ব চিত্র।

গ্রামে রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের কারবার, বার বারই পুলিশের কাছে এমন খবর আসছিল। সোমবার রাতে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে দু’জন চোলাই কারবারিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু ধৃতদের কিছু আত্মীয় ও পড়শি পুলিশের উপরে চ়ড়াও হয়ে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে খানিক ধস্তাধস্তি হয়। জনতার আক্রমণে মাথা কেটে যায় এক পুলিশ কর্মীর। পরে বিশাল বাহিনী যায় বাগদার কাটাখালি এলাকায়, ঘটনাস্থলে। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগে পরে রাস্তা অবরোধ করে জনতা। শেষমেশ আরও ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। বেশ কিছু চোলাইয়ের প্যাকেট উদ্ধারও করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কাটাখালি এলাকায় বনগাঁ-বয়রা সড়কের পাশে দুলাল পাণ্ডের বাড়ি। সংলগ্ন মুদিখানা চালায় সে। অভিযোগ, তারই মুদিখানা থেকে প্যাকেটের পর প্যাকেট ‘পেপসি’ (স্থানীয় ভাষায় চোলাইয়ের পাউচের নাম) বিক্রি হচ্ছে। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে সেই চোলাই। সঙ্গে দেদার বিকোচ্ছে বাংলা মদ। সব মিলিয়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা দিনের রোজগারের প্রায় সব টাকাটাই চোলাই-মদ খেয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। সংসারে অশান্তি বাড়ছে।

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরে এই খবর আসায় পুলিশ সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ অপারেশনে নামে। টহলদার ভ্যানে বাগদা থানার ৫ পুলিশ কর্মী পৌঁছে যান দুলালের বাড়িতে। দোকানে হানা দেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, দোকানে ঢুকতেই পুলিশকে বাধা দেয় দুলাল, তার দুই ছেলে দীলিপ ও দীনেশ। ধাক্কাধাক্কিও করা হয়।

পুলিশ কোনও মতে দুই ছেলেকে গাড়িতে তোলে। অভিযোগ, সে সময়ে পুলিশের উপরে চড়াও হয় জনতা। মারধর করা হয় পুলিশ কর্মীদের। ধৃতদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। রাতের অন্ধকারে পুলিশ কর্মী সত্য হালদারের মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। মাথায় কেটে যায় তাঁর। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয় সত্যবাবুর। তবে পুলিশ কোনও মতে দু’জনকে ধরে নিয়ে আসে।

Advertisement

এ দিকে, পুলিশের উপরে আক্রমণের খবর পেয়ে ওসি প্রসূন মিত্র বিশাল বাহিনী নিয়ে এলাকায় পৌঁছন। পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঢুকে লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কিছু মানুষের। যার প্রতিবাদে রাত ১০টা নাগাদ বনগাঁ-বয়রা সড়ক অবরোধ শুরু করে জনতা। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে আঁচ করে আরও পুলিশ নিয়ে এলাকায় যান বনগাঁর এসডিপিও বিশ্বজিৎ মাহাতো। বিশাল পুলিশ বাহিনীকে লাঠি উঁচিয়ে গাড়ি থেকে নামতে দেখে রণে ভঙ্গ দেয় জনতা। তবে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে দুলাল, তার স্ত্রী পামেলা-সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এসডিপিও জানান, চোলাইয়ের কারবার নিয়ে কিছু দিন ধরেই অভিযোগ আসছিল। সে জন্যই তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশ কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছে। তবে এ ধরনের তল্লাশি ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।

মঙ্গলবার ধৃতদের বনগাঁ আদালতে তোলা হলে সকলকে ৮ তারিখ পর্যন্ত জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পামেলার দাবি, স্বামীকে মারধর করছিল পুলিশ। তারও গলা টিপে ধরা হয়। সে জন্য বাধা দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পুলিশের উপরে হামলা হয়নি।

অন্য দিকে, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে এমন পুলিশি অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বহু মানুষ। যদিও তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ নিয়মিত তল্লাশি চালালে এত বাড়বাড়ন্তই হয় না অসাধু কারবারিদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement