জয়নগরে তৃণমূল নেতাকে খুনের ঘটনায় নতুন সূত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে গুলি চালিয়ে খুনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন চার জন। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে তেমনটাই মনে করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত শাহরুল শেখ ছাড়াও যাঁর বাইক বাজেয়াপ্ত হয়েছে, দলুয়াখাকির সেই বাসিন্দা মুসিবুর রহমান, আর এক বাসিন্দা জাকির লস্কর এবং যাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেই সাহাবুদ্দিন লস্কর তৃণমূল নেতাকে খুনের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। বারুইপুরের পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানিয়েছেন, ধৃত শাহরুলই গুলি চালায়। শাহরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারুইপুর থেকে জয়নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, জয়নগরকাণ্ডের মূলচক্রী আনিসুর লস্কর নামে এক ব্যক্তি। তিনি দলুয়াখাকি গ্রামেরই বাসিন্দা। নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, সেখানেও নাম রয়েছে আনিসুরের। পাশাপাশি, পুলিশ সূত্রে খবর, জয়নগরকাণ্ডে ধৃত শাহরুল শেখ যে ‘বড়ভাই’-এর কথা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তাঁর নাম আলাউদ্দিন সাঁপুই। তিনি মন্দিরবাজার থানা এলাকার টেকপাঁজা গ্রামের বাসিন্দা। এলাকায় আলাউদ্দিন পরিচিত সিপিএম নেতা হিসাবে।
সইফুদ্দিন খুনের নেপথ্যে যে ভাড়াটে খুনি রয়েছে, তা আগেই আন্দাজ করেছিলেন তদন্তকারীদের একাংশ। খুনের আগে রীতিমতো পুরো এলাকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হয়। সবটাই পরিকল্পনামাফিক। আততায়ীদের গুলি করার দিনক্ষণ এবং অপরাধের ধরন দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, খুনের নেপথ্যে কোনও ‘পাকা মাথা’ রয়েছে। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পেরেছেন, সইফুদ্দিনকে খুনে এক লক্ষ টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল। সেই ভাড়াটে খুনিদের খোঁজ চলছে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত অনেকেরই হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ধরতে জয়নগর, বকুলতলা, কুলতলি, বারুইপুর থানার পিসি পার্টির ইনচার্জ এবং তাঁদের দলকে এই ঘটনার তদন্তে যুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার সকালে জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মসজিদ যাবেন বলে। নমাজ পড়তে যাওয়ার পথেই গুলিবিদ্ধ হন সইফুদ্দিন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যু হয় তাঁর। কী ভাবে খুন হয়েছিলেন ওই তৃণমূল নেতা, তার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, তৃণমূল নেতা ধীরেসুস্থে হাঁটছেন রাস্তা দিয়ে। আচমকা তাঁর পাশ ঘেঁষে দুটো মোটরবাইক এসে দাঁড়ায়। তার পরের দৃশ্য দেখা যায়নি। তবে বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাকে ছুটে আসতে দেখা যায়। তার পরেই মৃত্যু হয় ওই তৃণমূল নেতার। এই ফুটেজের মাধ্যমে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা শুরু করেন তদন্তকারীরা। তার মধ্যে আদালত থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় ধৃত শাহরুল শেখ দাবি করেন, তিনি গুলি চালাননি। তৃণমূল নেতাকে গুলি করেছেন অন্য কেউ।