স্বপ্না সরকার ও সুজিত দাস।
স্বামীর দেহ মাটিতে পুঁতে সে ঘরে বসেই ভরপেট মাংস ভাত খেয়েছিল স্ত্রী স্বপ্না। সঙ্গে ছিল প্রেমিক সুজিত। পুলিশের দাবি, জেরায় দু’জন জানিয়েছে, রাতে ওই ঘরে দু’বার শারীরিক সম্পর্কও হয় তাদের।
রামকৃষ্ণ সরকারকে খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে স্বপ্না সরকার ও তার প্রেমিক সুজিত দাসকে। পুলিশের দাবি, মাথায় লাঠির ঘা মেরে রামকৃষ্ণকে খুনের পরে প্রায় ৫০ মিটার দেহ টেনে এনেছিল তারা। কারও অপরাধের রেকর্ড নেই। কিন্তু যে ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টা করেছিল দু’জন, তা পেশাদার খুনিকেও হার মানায়— জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা অফিসারেরা। তাঁরা দু’জনকে জেরা করে আরও জানতে পেরেছেন, রামকৃষ্ণর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে খালে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। বুধবার সুজিতের ঘরের মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় রামকৃষ্ণর দেহ। খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল সোমবার রাতে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বনগাঁ মহকুমা আদালতে হাজির করায় পুলিশ। বিচারক তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে শাবল, চপার, কোদাল, রক্ত মাখা পোশাক-সহ বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গাইঘাটার গোয়ালবাথান এলাকায় এই খুনের ঘটনায় সুজিত-স্বপ্নার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথাই উঠে এসেছে তদন্তে। স্বপ্নার মা গৌরী রায় জানান, রামকৃষ্ণ মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে মারধর করতেন স্বপ্নাকে। ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, সুজিত পরে একটি ফোন কিনে দেয় প্রেমিকাকে। সেই ফোন থেকেই গোপনে দু’জনের যোগাযোগ হত। সুজিতের আগে দু’বার বিয়ে হয়েছিল। দুই স্ত্রী-ই বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে চলে যান। স্বপ্নার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পরে সুজিত তাকে বিয়ে করে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। স্বপ্নারও তাতে আপত্তি ছিল না। মাসখানেক আগে সুজিত বিয়ের জন্য চাপাচাপি করলে স্বপ্না কিছুটা সময় চেয়ে নেয়। বাজারে কিছু ধারদেনা আছে তার। সে সব মিটিয়ে নতুন সংসার পাতার কথা জানিয়েছিল সে। বনগাঁ শহরে স্বপ্নার বাপের বাড়ি। কাছেই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। সুজিতের বাড়ি গোয়ালবাথানে।
পুলিশ জানায়, ফোনে মিসড কলের সূত্রে স্বপ্নার সঙ্গে তার পরিচয়। স্বপ্নাকে সকলের সামনে ‘ধর্মবোন’ বলেই পরিচয় দিত সুজিত। স্বপ্নাদের বাড়ির পাশেই নিজে ঘর ভাড়া নেয়। তবে স্বপ্না-সুজিতের সম্পর্ক চাপা থাকেনি। অশান্তি শুরু হয়। সুজিতকে বাসা ভাড়া থেকে তুলে দেন বাড়ির মালিক। সুজিত অন্যত্র চলে গেলেও ফোনে যোগাযোগ ছিল স্বপ্নার সঙ্গে।
গৌরী পুলিশকে জানিয়েছেন, পুজোয় স্বপ্না-রামকৃষ্ণকে মাংস ভাত খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করেছিল সুজিত। বারণ করেছিলেন গৌরী। সোমবার ছোট ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নারা সুজিতের বাড়িতে গিয়েছিল। মাংস রান্না করেছিলেন সুজিতের মা সন্ধ্যা। তাঁকেও খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে স্বপ্না ও তার ছেলেকে সাইকেলে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বনগাঁয় পৌঁছে দেয় সুজিত। পড়শিরা জানতে চান রামকৃষ্ণ কোথায়। স্বপ্না উত্তর দেন, ‘‘আছে কোথাও মদ খেয়ে পড়ে।’’ ততক্ষণে মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে তাঁর দেহ।