পুলিশের প্রেম-জালে পাচারকারী

কিছু দিন আগে বনগাঁর কেউটিপাড়া এলাকা থেকে এক কলেজ ছাত্রী নিখোঁজ হন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সাগরের সঙ্গে মেলামেশা ছিল তাঁর। নারী পাচার চক্রে জড়িত সাগর, সন্দেহটা তখনই দানা বাঁধে পুলিশের।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৫:৩০
Share:

গুণধর: ধৃত ইসরাফিল।

ফোনে আলাপের সূত্রে ঘনিষ্ঠতা। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গুজরাত থেকে উজিয়ে ক্যানিঙে আসে এক যুবক। তবে প্রেমটা নেহাতই ফাঁদ ছিল, জানত না। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে প্রেমিক-প্রবর। তার বিরুদ্ধে নারীপাচার, অস্ত্রপাচারের মতো অভিযোগ আছে।

Advertisement

রবিবার দুপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে ধৃত যুবকের নাম ইসরাফিল লস্কর ওরফে সাগর। বাড়ি বাসন্তীতে। অভিযান চালিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানার পুলিশ। গত কয়েক মাস ধরে সাগরকে বাগে আনতে জাল বিছিয়েছিল তারা। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃত যুবক আগ্নেয়াস্ত্র পাচার, আন্তঃরাজ্য নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জানতে পেরেছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অতীতেও সাগর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সোমবার বনগাঁ আদালতের বিচারক সাগরকে ৯ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

কী ভাবে ফাঁদ পেতেছিল পুলিশ?

Advertisement

কিছু দিন আগে বনগাঁর কেউটিপাড়া এলাকা থেকে এক কলেজ ছাত্রী নিখোঁজ হন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সাগরের সঙ্গে মেলামেশা ছিল তাঁর। নারী পাচার চক্রে জড়িত সাগর, সন্দেহটা তখনই দানা বাঁধে পুলিশের।

সম্প্রতি বনগাঁ পুলিশ সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ কয়েকজন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। তাদের জেরা করেও সাগরের নাম জানা যায়। পুলিশ বুঝতে পারে, বড়সড় অপরাধীর সঙ্গে টক্কর নিতে হবে। সেই মতোই ছক কষা হয়। নানা সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, মহিলাঘটিত ব্যাপারে সুদর্শন যুবক সাগরের দুর্বলতার কথা। সেই সূত্র ধরেই এগোয় পুলিশ।

সাগরের ফোন নম্বর হাতে আসে বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজের। পুলিশের এক মহিলা ‘সোর্স’কে ওই নম্বরে ‘মিসড কল’ দিতে বলা হয়। ফাঁদে পা দেয় সাগর। ‘সোর্স’-এর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয় তার। পুলিশ জানাতে পারে, সাগর রয়েছে গুজরাতের নারদা থানা এলাকায়। জেলা পুলিশের একটি দল সেখানে হানা দিলেও সাগরের সন্ধান মেলেনি।

তবে পুলিশের ‘সোর্স’ ওই তরুণী সাগরের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্য দিকে, সাগরের এক প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান বনগাঁর থানার এক পুলিশ কর্মী। ওই তরুণী ‘নতুন প্রেমিকের’ কাছে বিষোদ্গার শুরু করেন সাগরের নামে। আরও তথ্য আসতে থাকে পুলিশের কাছে।

এ বার ছিল জাল গোটানোর পালা। পুলিশের কথা মতো, ‘সোর্স’ তরুণী সাগরকে দেখা করতে বলেন। সাগর তাঁকে রবিবার ক্যানিং স্টেশনে আসতে বলে। গুজরাত থেকে ক্যানিং চলে আসে ওই যুবক, স্রেফ প্রেমের টানে!

সতীনাথবাবু রবিবার দলবল নিয়ে ক্যানিঙে পৌঁছন। নিজে না এসে স্টেশনে এক সঙ্গীকে পাঠায় সাগর। তার সঙ্গে টোটোয় উঠে ওই তরুণী সাগরের সঙ্গে দেখা করতে এগোন। পিছু নেয় পুলিশ। একটা সময় ওই যুবককে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছে সাগর। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় ওই যুবককে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement