চিহ্ন: রাস্তায় এখনও পড়ে রয়েছে পোড়া টায়ার। নিজস্ব চিত্র।
নাটাবেড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ির কাজকর্মে অনেক দিন ধরেই মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে বাগদার বাজিতপুর বাজার এলাকায় ওই ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেই মনে করছেন এলাকার অনেকে।
গ্রামবাসী মনে করছেন, কোনও মৃত্যুর ঘটনার পরে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সড়ক অবরোধ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এ সব ঘটনায় পুলিশ গিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবরোধকারীরা শান্ত হন। তুলে নেওয়া হয় অবরোধ। কিন্ত এ ক্ষেত্রে পুলিশ গিয়ে আশ্বাস দেওয়ার পরেও জনরোষ আছড়ে পড়েছিল পুলিশের বিরুদ্ধেই।
সোমবার রাতে বাজিতপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল সন্তোষা এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের দেহ। মঙ্গলবার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে রাতে দেহ আগলে কয়েকশো গ্রামবাসী বাজিতপুরে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। টায়ার জ্বালানো হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তোলে উত্তেজিত জনতা। ঘটনাস্থলে নাটাবেড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ যেতেই আগুনে ঘি পড়ে। অভিযোগ, পুলিশকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি করে কার্যত এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ফাঁড়ির ইনচার্জ একটি মিষ্টির দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। শাটার বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে, লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। জনতা পুলিশকে লক্ষ্য ইট, বোতল ছোড়ে, বোমা ফাটায়। কয়েকজন পুলিশ কর্মী জখম হন।
কেন পুলিশের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ?
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইদানীং নাটাবেড়িয়া ফাঁড়ি এলাকায় মদ-গাঁজার রমরমা কারবার শুরু হয়েছে। সেই সূত্রে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। স্থানীয় অনেকে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। অনেকের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের মদতে বেআইনি কারবার চলছিল। ইদানীং এলাকায় যৌনব্যবসাও শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ। কোনও কিছু নিয়েই পুলিশের হেলদোল দেখা যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ।
তল্লাশির নামে গাড়ি, বাইক, ইঞ্জিন ভ্যান আটকে পুলিশ টাকা তুলছিল বলে অভিযোগ। বাইক ছাড়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। বাসিন্দাদের কথায়, গাড়ি বা বাইকের নথিপত্র সঠিক না থাকলে পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করুক। কিন্তু তা না করে খেয়াল-খুশি মতো টাকা চাওয়া হচ্ছিল।
কিছু গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, এলাকায় গাঁজা চাষ হয়। অনেক সময়ে পুলিশ গাঁজা গাছ কেটে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে নিজেদের মতো বিক্রি করে দেয়। এলাকায় বেআইনি ভাবে গাছগাছালি কাটার কারবারে পুলিশের মদত থাকে বলেও অভিযোগ। অনেকেই জানালেন, কোনও প্রয়োজনে ফাঁড়িতে গেলে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। দুর্ব্যবহার করা হয়। বাধ্য হয়ে অনেকে বাড়ির কাছে ফাঁড়িতে না গিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে হেলেঞ্চায় বাগদা থানায় যেতে বাধ্য হন।
কয়েক মাস আগে ‘বাগদা এসডিপিও’ পদ তৈরি হয়েছে। প্রথম এসডিপিও হিসেবে সুকান্ত হাজরা দায়িত্ব নিয়েছেন। বাজিতপুরের কাছে সিন্দ্রাণী এলাকায় এসডিপিওর অফিস। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আলাদা করে এসডিপিও পদ সৃষ্টি করে কোনও লাভ হয়নি। বরং বেআইনি কার্যকলাপ বেড়ে গিয়েছে। এ সব কারণে মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে এলাকার মদ-গাঁজা বিক্রির কোনও সম্পর্ক নেই। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘মদ-গাঁজা কারবারের বিরুদ্ধে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হয়। অভিযোগ পেলে ভবিষ্যতেও পদক্ষেপ করা হবে।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।