নজরদারি পুলিশের। জয়নগরে। নিজস্ব চিত্র
আগে ১০ টাকাতেই পৌঁছে যাওয়া যেত চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে। এখন সেই পথের জন্যই দিতে হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। লকডাউনের পরে জেলা জুড়ে বিভিন্ন রুটে অটো ভাড়া এ ভাবেই বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। রাত হলে আরও বেশি ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। জয়নগর ও সংলগ্ন একাধিক রুটে অটো ভাড়া অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার এই অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ বার পথে নেমেছে জয়নগর থানার পুলিশ। মোড়ে মোড়ে চলছে নজরদারি। বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
লকডাউন শিথিল হওয়ার পর প্রাথমিক ভাবে আগের থেকে কম যাত্রী নিয়ে অটো চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ফলে যাত্রী পিছু ভাড়া অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল অটোগুলি। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, নিয়ম মেনে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। যেমন খুশি ভাড়া নিচ্ছিলেন চালকরা। এমনকী কিছুদিন যেতে না যেতেই আগের মতো ঠাসাঠাসি করে যাত্রীও তুলতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু ভাড়া আর কমেনি। ফলে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। জয়নগরের বাসিন্দা রাজেশ দাস বলেন, “জয়নগর থেকে বহড়ু পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তার অটো ভাড়া ছিল ১২ টাকা। লকডাউনের পর থেকে কেউ ২০, কেউ ২৫ টাকা করে নিচ্ছেন। দক্ষিণ বারাসত বা চরণ গেলে ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে আরও কয়েকগুণ। রাতের দিকে তো ইচ্ছে মতো ভাড়া নেন চালকরা। বলা হচ্ছে কম যাত্রী নেওয়ায় জন্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আদতে সেই ঠাসাঠাসি করেই যাত্রী তোলা হচ্ছে।”
যাত্রীদের ক্রমাগত অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি অটো ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে পুলিশ। সেখানে জানিয়ে দেওয়া হয়, রুট পিছু ভাড়া নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তার বেশি ভাড়া নিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি অটো পিছু পাঁচ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জয়নগর থানার আইসি অতনু সাঁতরা বলেন, “আমরা মোড়ে মোড়ে নজরদারি শুরু করেছি, বেশি ভাড়া নেওয়া বা অতিরিক্ত যাত্রী তোলার অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক সময় রাতের দিকে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। সেদিকেও আমরা নজর রাখছি।”
এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে অটো ইউনিয়নগুলিও। ইউনিয়ন সূত্রের খবর, প্রশাসনের নির্দেশ মতো পাঁচ জন যাত্রী নিয়েই অটো চালানো হবে। সেক্ষেত্রে আগের তুলনায় ভাড়া কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রুটের ভাড়া কাগজে ছাপিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বিলি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অটো স্ট্যান্ডগুলিতে ভাড়ার ব্যাপারে প্রচারও করা হবে। জয়নগর ও সংলগ্ন একাধিক রুটের অটো ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান সর্দার বলেন, “কিছু অসাধু চালক সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। আমরা সবরকম ভাবে তা আটকানোর চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের পাশেই আছি। পাশাপাশি যাত্রীদেরও অনুরোধ করছি, নির্দিষ্ট ভাড়ার বেশি দেবেন না।”
মান্নান জানান, অটো ভাড়া নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ এসেছে প্রশাসনের উপর মহল থেকে। তাঁর কথায়, “বিধায়ক-সহ অন্য নেতারাও ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত। যাত্রীদের স্বার্থে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন।” স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস বলেন, “অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য বহু মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। তাই বিষয়টির সুষ্ঠ সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”