জয়নগরের নিহত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। —ফাইল চিত্র ।
জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর সোমবার খুন হওয়ার পরেই জ্বলে উঠেছিল জয়নগরের দলুইখাকি। গ্রামের একের পর এক বাড়ি, দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই কার্যত পুরুষশূন্য সেই গ্রাম। প্রশাসনের তরফে গ্রামছাড়া পুরুষদের ফেরানোর কথা রয়েছে বুধবার। যদিও বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেউ গ্রামে ফেরেননি। অধীর আগ্রহে তাঁদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় পরিবারের সদস্যেরা। পাশাপাশি, গত দু’দিনের মতো বুধবার সকালেও নিস্তব্ধতা এবং থমথমে পরিবেশে ডুবে রয়েছে দলুইখাকি গ্রাম।
অন্য দিকে, গত দু’দিন ধরে বাড়ির পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে চিন্তায় ঘুম উড়েছে বহু পরিবারের। পরিবারের পুরুষেরা বাড়ি না ফেরায় বাজারহাট হয়নি। গত দু’দিন ধরে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছে পরিবারগুলি। গ্রামের এক পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা সদস্যের কথায়, ‘‘এই ক’দিন ধরে রাতে ঘুম নেই। রান্না হচ্ছে না। সে ভাবে খাওয়াদাওয়া হচ্ছে না। কোথায় থাকব, কী খাব বুঝে উঠতে পারছি না। বাচ্চাদের কী খেতে দেব জানি না।’’ গ্রামবাসীরা এ-ও দাবি করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে এসে দাঁড়ায়নি প্রশাসন। খাবারদাবার থেকে শুরু করে মাথা গোঁজার ত্রিপল—কোনও ত্রাণই এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি, পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা বুধবার সকাল পর্যন্ত বাড়ি ফিরে না আসার কারণে আশা-আশঙ্কার ছাপ ফুটে উঠেছে গ্রামের বিভিন্ন পরিবারে। অভিযোগ উঠেছিল, সইফুদ্দিন খুনের পর বেছে বেছে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়িতেই হামলা চালানো হয়েছে। তার পর থেকেই গ্রাম ছাড়েন সেই সব পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা। সিপিএমের নেতা অপূর্ব প্রামাণিকের দাবি, বুধবার দুপুরের মধ্যেই ঘরে ফিরবেন গ্রামছাড়ারা। তিনি জানান, তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাতে নতুন করে কোনও অশান্তি না হয়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, জয়নগরের ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার থানার সামনে বিক্ষোভ করে ডেপুটেশন দেওয়ার কথা আছে এসইউসিআইয়ের। এপিডিআরের একটি প্রতিনিধি দলেরও জয়নগর যাওয়ার কথা। তবে বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস জানান, বহিরাগত কাউকেই আপাতত এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। এলাকায় থাকতে পারবেন শুধুমাত্র গ্রামের বাসিন্দারাই।
একই সঙ্গে পুলিশ সূত্রে খবর, জয়নগরের ঘটনায় নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। রাতে পুলিশের ১০টি দল বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। ধৃত শাহরুল শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে সব তথ্য সামনে এসেছে তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় আরও বেশ কয়েকটি নাম সামনে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তাঁদের সন্ধানেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের লোকেশন পেতে সমস্যা হচ্ছে। আপাতত বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।