রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
মাসতিনেক আগেই জানা গিয়েছিল, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০০ ছুঁয়েছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকার বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিলেন বন আধিকারিকরা। জীবন-জীবিকা নিয়ে আরও আশার আলো দেখছিলেন বাদাবনের মানুষেরা। কিন্তু হঠাৎই রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘প্রজেক্ট টাইগার’ বা বাঘ সংরক্ষণে নিয়ামক প্রকল্পটিকে কেন্দ্র গুটিয়ে ফেলার কথা ঘোষণা করায় অশনি সঙ্কেত দেখছেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব অবশ্য জানিয়েছেন, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পটি দেশের হস্তি সংরক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে। কিন্তু যখন সংরক্ষণের কারণে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সুন্দরবনেও বাঘের সংখ্যা বাড়ছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে, এখানকার জঙ্গল লাগোয়া নদীতীরবর্তী মানুষদের জীবন-জীবিকা পুনর্গঠনের কাজ থমকে যাবে না তো?
১৯৭৩ সালে সারা দেশের সাথে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পও চালু হয়। বিগত কয়েক বছর এই প্রকল্প সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার জীবনযাপনে যথেষ্ট ছাপ ফেলেছে। বহু জঙ্গলনির্ভর মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। যৌথ বন পরিচালন কমিটির মাধ্যমে এলাকার রাস্তা তৈরি, জেটি তৈরি, আলোর ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সামাজিক উন্নয়নের অনেক কাজই হয়েছে এই প্রকল্পের হাত ধরে। সুন্দরবনের পর্যটন থেকে আসা লভ্যাংশের একটা মোটা অংশ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় হয় এ সব কাজে। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে সে সব কাজ থমকে যাবে বলেই আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
সাতজেলিয়ার বাসিন্দা নবীন সর্দারের কথায়, ‘‘আগে জঙ্গলে কাঠ কাটতে, মাছ-কাঁকড়া ধরতে যেতাম। এখন আর যাই না। সারা বছর বন দফতরের তরফেই আমাদের নানা কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে কাজ কি আর পাব? না হলে তো আবার বাঘের মুখে যেতে হবে জীবিকার সন্ধানে।”
পাখিরালয়ের বাসিন্দা নীলিমা মণ্ডল ও কেতকী জানা বলেন, “আমরাও জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরা ছেড়ে দিয়ে এখন হাতের কাজ করছি। বন দফতর নানা ধরনের শিল্পসামগ্রী বানানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমাদের তৈরি জিনিস বিক্রিরও ব্যবস্থা ওরাই করেছে। ফলে, সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। কিন্তু প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কি আর কাজ পাব?”
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি ভাল হবে না খারাপ, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার সদস্যেরা। ‘শের’ নামে একটি সংস্থার সম্পাদক জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, “অন্তত কিছুদিন না গেলে এর ফলাফল বোঝা যাবে না।”
মাসতিনেক আগে সুন্দরবনের বাঘের আরও ভাল সংরক্ষণের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের তিনটি রেঞ্জকে (মাতলা, রায়দিঘি ও রামগঙ্গা) সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এই তিনটি রেঞ্জের ১১০০ বর্গ কিলোমিটারে আনুমানিক ৩০টি বাঘ রয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। অন্যদিকে, বর্তমানে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে ন্যাশনাল পার্ক ইস্ট, ন্যাশানাল পার্ক ওয়েস্ট, সজনেখালি ও বসিরহাট রেঞ্জের ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সুন্দরবনে মোট ১০০টির মতো বাঘ রয়েছে বলে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করে কেন্দ্র। নতুন এই সংযুক্তিকরণ হলে ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা একটাই প্রশাসনিক ছাতার তলায় চলে আসত।