শুধু হাওড়াই নয়, হাবড়ায় এলেও একেই রকম ক্ষুব্ধ হতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে না দেখে প্রশাসকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূমের প্রশাসনিক সভায় প্রকাশ্যেই বলেছেন সে কথাও।
হাবড়া পুর এলাকার মানুষের অভিজ্ঞতাও কমবেশি একই রকম। এখানেও পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রশাসক বসানো হয়েছে। আর তাতে পুরসভার বহু নিয়মিত কাজেও ব্যাঘাত হচ্ছে বলে অভিযোগ মানুষজনের।
হাবড়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের রানিবালা সাহা সরণি এলাকায় যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেল আবর্জনার স্তূপ। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাবড়ার স্থানীয় ২ নম্বর রেলগেট মোড় এলাকায় রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেল। পুর এলাকায় সব জায়গারই কমবেশি এমন অবস্থা বলে অভিযোগ। নিকাশি নালাও বেহাল।
হাওড়ার হাল দেখে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই পুরসচিব সুব্রত গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছেন, যে সব পুরসভায় প্রশাসক বসেছে, তাদের উপরে ছোট ছোট কমিটি করে দিতে। কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটা মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়ে দেবেন বলে মন্তব্য করেন।
তৃণমূল পরিচালিত হাবড়া পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২১ অক্টোবর। তারপর থেকে প্রশাসকের হাতে গিয়েছে দায়িত্ব।
বারাসতের মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাসের দাবি, হাবড়া পুর এলাকায় নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার, নিকাশি নালা সাফাই করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি থেকে পুরসভার গাড়ি গিয়েও আবর্জনা নিয়ে আসছে। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবারগুলিকে ভ্যাট দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে গিয়েও কাজের তদারকি করছি। আমার কাছে নাগরিকেরা কোনও অভিযোগ করেননি।’’ শহরবাসীর অনেকের অভিজ্ঞতাই অবশ্য অন্য কথা বলছে।
জঞ্জাল পরিষ্কার, নিকাশি-নালা সাফাইয়ের কাজে ঢিলেমি এসেছে, নজরদারিও কমেছে বলে অভিযোগ অনেকের। বাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়ে আসা, মশা মারার কাজ হচ্ছে ধীর গতিতে। প্লাস্টিকের ব্যবহারও বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সড়কে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা কমেছে।
হাবড়া শহরের বাজারগুলির নিকাশি নালার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা গেল আবর্জনা। বাসিন্দারা জানালেন, প্রশাসক বসার পর থেকে সাফাইয়ের কাজ হচ্ছে না, এমনটা নয়। কিন্তু কাজে গতি কমেছে।
মানুষ আগে সমস্যার কথা আগে কাউন্সিলর বা পুরপ্রধানকে জানাতেন। এখন কিছু জানাতে হলে পুরসভায় যেতে হচ্ছে। অনেকের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাসের কথায়, ‘‘নালা ও জঞ্জাল সাফাই নিয়ে কোনও সমস্যা তৈরি হলে আমরা প্রশাসককে জানাচ্ছি। তিনি পদক্ষেপ করছেন।’’
পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘জঞ্জাল পরিষ্কার, নালা সাফাই নিয়মিত করা হচ্ছে না। দেখভালের অভাব রয়েছে। সাফাই কর্মীদের যা বেতন দেওয়া হচ্ছে, তাতে তাঁরাও কাজে উৎসাহ হারিয়েছেন। বেতনও নিয়মিত পাচ্ছেন না।’’ পুরসভার এক প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরও নিকাশি নালা, জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে নজরদারির অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরসভার দায়িত্বে থাকার সময়ে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বাদ দিয়ে প্রতিদিনই সাফাই কর্মীরা সকাল ৬ থেকে ১১টা পর্যন্ত নালা ও জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ করতেন।
পুরপ্রধান-সহ নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা ওই কাজে তদারকি করতেন। এখন কর্মীরা সকাল ৭টায় কাজ শুরু করে দু’তিন ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলছেন। নজরদারির অভাব রয়েছে।’’