রবিবার সকালে সুন্দরবনে পর্যটকদের নিজস্বী। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
বড়দিনের ভোর ছিল কুয়াশা ঘেরা। বেলা একটু বাড়তেই রোদ ঝলমলে একটা দিন। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা না থাকলেও আরামদায়ক শীত গায়ে মেখে মানুষজন বেরিয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়। টাকি, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবারের পিকনিক স্পটগুলিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে গত কয়েকদিন ধরে বিশেষজ্ঞেরা কোভিড-বিধি পালন নিয়ে সতর্কতার কথা বলছেন, সে সবের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি উৎসবমুখী মানুষের ভিড়ে। কোথাও কোথাও আবার ডিজে বক্সের দাপট ছিল।
করোনা সংক্রমণ ফের দাপটের সঙ্গে ফিরে আসতে পারে বলে বার বার বার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে মোকাবিলা করার জন্য দুই জেলায় পরিকাঠামো চাঙ্গা আছে বলেই দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ফিরে আসেনি বলেই দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। বুস্টার ডোজ় নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাগিদ চোখে পড়ছে না।
বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, “বেশিরভাগ মানুষের ইতিমধ্যে বুস্টার ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। নতুন করে মানুষের মধ্যে এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই।” এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “বুস্টার ডোজ়ের সরবরাহ আপাতত বন্ধ। এলে ফের দেওয়া হবে।”
বুস্টার ডোজ় নিতে কি মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হবে?
এ বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর থেকে যে রকম নির্দেশ আসবে, সেই মতো কাজ হবে।”
ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত বুস্টার ডোজ় নিতে ভিড় দেখা না গেলেও ভ্যাকসিনের জোগান আছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত সুকুল বলেন, “করোনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সমস্ত রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকদিন ল্যাবরেটরিতে করোনা পরীক্ষা চলছে। ২৭ ডিসেম্বর ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ১০০ শয্যার কোভিড ভবনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে।” কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় বুস্টার ডোজ় নিতে হাসপাতালগুলিতে তেমন ভিড় নেই বললেই চলে। করোনা পরীক্ষা করাতেও তেমন কেউ আসছেন না। কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়মিত ভাবে কমসংখ্যক মানুষ কোভিড টেস্ট করাচ্ছেন বলে জানা গেল।
কাকদ্বীপ, সাগর, নামখানা ও পাথরপ্রতিমার বাজার এলাকায় প্রচুর লোকের সমাগম। কিন্তু কাউকে মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না। কোভিড সচেতনতার কোনও লক্ষণ চোখে পড়ছে না এলাকায়।
কাকদ্বীপ মহকুমার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিষেক রায় বলেন, “ভ্যাকসিন ও বুস্টার ডোজ়ের জোগান জেলায় আছে। কিন্তু কেউই নিতে আসছেন না।’’ তিনি জানান, নিয়মিত ভাবে কয়েক মাস ধরে কিছু কোভিড পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
ক্যানিং মহকুমা জুড়ে বুস্টার ডোজ় কার্যত বন্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কোভিডের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সে ভাবে প্রতিষেধক নিতে মানুষ আসছেন না। সে কারণেই বন্ধ রয়েছে বুস্টার ডোজ়। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নতুন করে সরকারি নির্দেশিকাও আসেনি বলে দাবি প্রশাসনের। আরটিপিসিআর পরীক্ষাও তেমন কিছুই হচ্ছে না মহকুমা ও ব্লক হাসপাতালগুলিতে।
তবে স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, মানুষকে মাস্ক পরে থাকতে হবে। উৎসবের মরসুমে দূরত্ববিধিও ভুললে চলবে না।