বসতি: বকখালিতে। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গল আছে। জঙ্গল দখল করে আছেন মানুষ। দখলদার উৎখাত করার আইনও আছে। নেই শুধু ছোট্ট এক তথ্য। জঙ্গলের পরিধি কতটা? তাই দখলকারীদের উৎখাত করার কাজে এগনোই যাচ্ছে না।
এই হল বকখালি অঞ্চলের সাধারণ ছবি। নামখানার ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টালের বকখালির জঙ্গল কেটে বাড়ি ও দোকানের নির্মাণ চলছেই। দিনকয়েক আগেই সুপ্রিম কোর্ট বনভূমি বাঁচাতে অরণ্য দখলকারীদের উৎখাতের রায় দিয়েছেন। অথচ জঙ্গলের সীমারেখা কতটা, তা আজও বুঝে উঠতে না পারায় কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারছে না বন দফতর। নামখানা ব্লকের ফ্রেজারগঞ্জ পঞ্চায়েতে সমুদ্র লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে গভীর জঙ্গল। জঙ্গল লাগোয়া তিনটি গ্রাম— অমরাবতী, লক্ষ্মীপুর ও বিজয়বাটী। লক্ষ্মীপুর ও বিজয়বাটীর অনেকটা অংশই জঙ্গলের নিজস্ব এলাকা। ওই জঙ্গলে রয়েছে হরিণ, বুনো শুয়োর, শেয়াল, বাঁদর, সাপ। লক্ষ্মীপুরের রাস্তার ধারে কয়েক বছর ধরে জঙ্গল কেটে টিনের দেওয়াল ও অ্যাসবেসটসের ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়ে চলেছে দোকান ও বাড়ি। ঠাঁই করে নিয়েছে ছাব্বিশটির মতো মৎস্যজীবী ও দিনমজুর পরিবার। দখল হওয়া এই সব জমি সেচ না বন দফতরের, তা নির্ধারিত না হওয়ায় কোনও পক্ষই ব্যবস্থা নিতে পারেনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, অন্য সমস্যাও আছে। দখলকারী পরিবারগুলিকে এক সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনের তরফেই বসানো হয়েছিল। দরিদ্র ছিন্নমূল এই পরিবারগুলি বিভিন্ন জায়গা থেকে এই অঞ্চলে আসে। তাদের জায়গা করে দিতেই নির্মাণকাজ হয়েছে। ফলে সেচ বা বন দফতর কোনও পক্ষই দখলকারীদের উৎখাত করতে আগ বাড়িয়ে পদক্ষেপ করছে না। তবে শুরু হয়েছে অন্য একটি কাজ। গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের তরফে জঙ্গলের সীমা ধরে প্রাচীর নির্মাণ চলছে। ৪ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বকখালির বনাঞ্চলের চারদিকে ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে। প্রাচীর হলে বন্যপ্রাণী যেমন নিরাপদে থাকবে, তেমনিই বন্ধ হবে গাছকাটাও। পাশেই জঙ্গল থাকায় প্রায়শই হরিণ, শুয়োর, শেয়াল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। অনেক সময়েই তাদের মেরে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। অনেকেই চোরাপথে গাছ কেটে তা জ্বালানি হিসেবে চড়া দামে বিভিন্ন হোটেল ও রেঁস্তরায় বিক্রি করে। প্রাচীর হলে এই সব অত্যাচার বন্ধ হবে। রক্ষা পাবে বন্যপ্রাণীও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জঙ্গল কেটে জমি দখল করে বসবাস চলায় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। তাঁরা চান জঙ্গলের সীমানা চিহ্নিত হোক। হোক নজরদারিও। এ বিষয়ে বকখালি বন দফতরে রেঞ্জার সুবোধ সরকার বলেন, ‘‘আমি যতটুকু শুনেছি, সকলেই দখলকারী নন। জঙ্গল-লাগোয়া কিছু ব্যক্তি-মালিকানার জমি ছিল। সেই জমিই তাঁরা সংশ্লিষ্ট মালিকদের থেকে কিনে নিয়ে বাস করছেন। এর মধ্যে পঞ্চায়েতের কোনও হস্তক্ষেপ আছে কিনা, জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তিনি আরও জানান, ওই সমস্যা সমাধানের জন্যই জঙ্গল ঘিরে প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। জঙ্গলের জমির প্রকৃত সীমানা কতটা, তা-ও দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।