বন্ধ হওয়ার মুখে ওষুধের দোকান। নিজস্ব চিত্র
বন্ধ হওয়ার পথে পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান। অভিযোগ, বিপুল ছাড় দিয়েও আসছে না ক্রেতা। দিনের পর দিন বাড়ছে লোকসানের বোঝা। এর জেরেই দোকান বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি আবেদন জানিয়েছেন ওই দোকানের মালিক।
২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রোগীর ওষুধ কেনার খরচ কমাতে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পাশে সরকার নিয়ন্ত্রিত ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান খোলার পরিকল্পনা করা হয়। বাজারদরের থেকে অনেক কম দামে ওযুধ বিক্রির ব্যবস্থা হয় এই সব দোকানে। ২০১৪ সালের ২ অগস্ট পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালের পাশেই ছাদ ফেলা একটি বড় ঘরে ন্যায্যমূল্যের ওযুধের দোকানের উদ্বোধন হয়েছিল। উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের পরিষদীয় সচিব নির্মল মাজি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা-সহ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা।
দোকানে বোর্ড লাগিয়ে ৫৮ শতাংশের বেশি ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু অভিযোগ, প্রথম কয়েক মাস স্বাভাবিক ভাবে চলার পরে ক্রেতার সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে প্রায় কেউই ওই দোকানে যাচ্ছেন না।
এত ছাড়ের পরেও কেন দোকান থেকে ওযুধ কিনছেন না ক্রেতারা?
হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, ভর্তি থাকা রোগীরা বেশিরভাগ ওষুধ হাসপাতাল থেকেই পেয়ে যান। গর্ভবতীদের আয়রন, ক্যালসিয়াম-সহ প্রায় সব ওষুধই হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। ফলে তাঁদের আর ওযুধ কেনার দরকার হয় না। হাসপাতালের বিএমওএইচ কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে প্রায় ৯৯ শতাংশ ওষুধ রোগীরা পেয়েই যান। ফলে দোকান থেকে কেনার দরকার হচ্ছে না। সে কারণেই দোকানটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমার কাছে আবেদন এসেছে। আমি তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
তবে ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর আত্মীয়দের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। শৈবাল জানা, পলাশ দাসদের কথায়, ‘‘নামেই সস্তার ওষুধের দোকান। বাজারে যে ওষুধের দাম ১০ টাকা, সেই ওষুধ সরকারি দোকানে ১৫ টাকা প্রিন্ট ফেলা রয়েছে। ওই ১৫ টাকা থেকে ৫ টাকা ছাড় দিয়ে ১০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাজারের সমান দামই পড়ে যায়। তা ছাড়া, ওষুধের গুণগত মান ভাল নয়। বাইরের চিকিৎসকেরা যে ওষুধ লেখেন, তা ওখানে পাওয়া যায় না।’’
পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার বনদীপ দেবনাথের দাবি, ‘‘দোকানটি ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু কোনও ভাবে এলাকায় রটে যায়, ওই দোকানের ওষুধের গুণগত মান ভাল নয়। তারপর থেকেই কেউ আর আসেন না।’’ তাঁর অনুমান, বাইরের ওষুধ বিক্রেতারা ব্যবসা বাঁচাতে এ সব রটিয়েছে।