প্রতীকী ছবি।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন টাকি পুরসভার ৫টি ওয়ার্ডে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন বাম প্রার্থীরা। ২টি ওয়ার্ডে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বিজেপি প্রার্থী। কয়েকটি আসনে মনোনয়ন জমা দেয়নি বিরোধীরা। সব মিলিয়ে ১৬ আসনের পুরসভায় ৬টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল শনিবার। ২ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেননি। সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন তাঁরা। যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মমতা মজুমদার মণ্ডল শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। শনিবার নতুন করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাম-কংগ্রেস প্রার্থীরা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী শাশ্বতী দাস বলেন, ‘‘এই প্রথম প্রার্থী হয়েছিলাম। টাকিতে বরাবরই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়। এ বারও তাই হবে ভেবেছিলাম। তবে আমার বাড়িতে এসে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী ভাঙচুর করে গালিগালাজ করেছে শুক্রবার রাতে।’’ শাশ্বতী বলেন, ‘‘শাসকদলের তরফে যে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছিল আমাকে, তাই প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলাম।’’
বাম-কংগ্রেস জোটের যে প্রার্থীরা শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন, তাঁদের সকলের অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে থাকলেও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সুজয় ঘোষ বলেন, ‘‘হঠাৎ শরীর খারাপ লাগছে, তাই প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করেছি। আমাকে কেউ কোনও হুমকি দেয়নি।’’
টাকির বাম নেতা অনুপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘তৃণমূল টাকিতে পুরভোটকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি করল, যা আগে কখনও এখানে হয়নি। যে সব ওয়ার্ডগুলিতে বাম প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল, সেই সব প্রার্থীদের বাধ্য করা হল মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে।’’
১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১, ৫, ৬, ৭— এই চারটি ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেননি। ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার নেতা তাপস ঘোষ। তৃণমূলের হুমকির জেরেই তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ টাকির পুরভোটের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা তুলসী দাস।
এই পরিস্থিতিতে টাকি পুরসভার ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী নেই। এর মধ্যে শুধুই ৪ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রার্থী আছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল জয় পেতে চলেছে।
৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে।
এ বিষয়ে টাকির তৃণমূল নেতাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিদায়ী পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের ফোন বেজে গিয়েছে। মেসেজেরও উত্তর মেলেনি। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যদি সত্যিই সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটত, তা হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতেন ওঁরা। তা কেউ করেননি। সকলেই নিজে গিয়ে এসডিও অফিসে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। আসলে জনসমর্থন নেই, ভোটে জিততে পারবে না বুঝে গিয়েছেন বিরোধী দলের প্রার্থীরা। মুখরক্ষা করার জন্য সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন।’’
পুলিশ জানিয়েছে, হুমকির কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায়।
বসিরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় আগেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। হুমকির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। শনিবার, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন একই অভিযোগে বাদুড়িয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এবং সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তুলে নিলেন।
এ বিষয়ে বিজেপি নেতা তাপস ঘোষ এবং সিপিএমের অনিমেষ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তৃণমূলের হুমকিতেই এই অবস্থা। মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন কোনও কোনও প্রার্থী। বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তৃণমূলের বিধায়ক সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘সব ওয়ার্ড প্রার্থী জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে বিজেপি এবং সিপিএম আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। আমাদের পক্ষে তো আর বিরোধী দলের প্রার্থী জোগাড় করে দেওয়া সম্ভব নয়!’’