গোবরডাঙা পুরসভা। নিজস্ব চিত্র
আশেপাশের এলাকায় একের পর এক মানুষ যখন জ্বর-ডেঙ্গিতে মারা যাচ্ছেন, হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন— তখন গোবরডাঙা পুর এলাকায় ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। পুর কর্তৃপক্ষের সচেতনতার ফলেই মশার দাপট রুখে দেওয়া গিয়েছে এখানে। নিট ফল, ষোলো হাজার পরিবার নিয়ে তৈরি পুরসভায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে মাত্র ৫ জনের রক্তে। কোনও মৃত্যুর খবর নেই বলেও জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
গোবরডাঙা এলাকাটি হাবরা থানার মধ্যে পড়ে। হাবরা পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন জনা কুড়ি বাসিন্দা। কিন্তু গোবরডাঙায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়ায়নি। অন্য পুর এলাকাগুলিতে মশা মারা নিয়ে মানুষের কমবেশি ক্ষোভ থাকলেও গোবরডাঙাবাসী পুরসভার ভূমিকায় সন্তুষ্ট।
কী ভাবে এমনটা সম্ভব হল?
পুর এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, পুরসভার উদ্যোগ এবং মানুষের সচেতনতা— দুইয়ের সুফল মিলেছে। পুরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত বাড়িতে গিয়ে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। নিয়ম করে কামানও দাগা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত নিজে এলাকায় গিয়ে গিয়ে মশা মারার কাজ তদারক করছেন। পাশাপাশি বাসিন্দারা নিজেরাও বাড়িতে জল জমতে দিচ্ছেন না। তেল, চুন, কেরোসিন কিনে নিজেরাও বাড়ির চারপাশে ছড়াচ্ছেন।
স্থানীয় মাস্টার কলোনির বাসিন্দা তথা গোবরডাঙা পুর উন্নয়ন পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ইতিমধ্যেই তিন বার বাড়ি এসে পুরসভার কর্মীরা মশা মারার তেল স্প্রে করে গিয়েছেন। ঝোপ-জঙ্গলও পরিস্কার করা হচ্ছে।’’ গৈপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল ঘোষ জানালেন, পুরসভার পক্ষ থেকে ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করতে মাইক প্রচার হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি তেলও স্প্রে করা হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্তদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা শিবিরও করা হচ্ছে।’’ তবে কিছু ক্ষোভ আছে যত্রতত্র প্লাস্টিকের গ্লাস, থার্মোকলের থালা-বাটি ফেলে রাখায়। সর্বত্র সে সব সাফ হয়নি। সেখানে মশার লার্ভাও জন্মাতে পারে।
স্থানীয় সিপিএম নেতা শঙ্কর নন্দী জানালেন, তাঁর বাড়িতেও পুরসভার পক্ষ থেকে মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছে। তবে নিকাশি নালাগুলি আরও বেশি করে সাফাইয়ের প্রয়োজন বলে তাঁর মত। শঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘নালায় নোংরা জল থাকে ঠিকই। তবে এখানে পরিস্কার জল তেমন কোথাও জমে নেই। সে কারণে ডেঙ্গি মশার দৌরাত্ম্য কম।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গি-জ্বরের প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই তাঁরা সচেতন হয়েছিলেন। জুলাই মাস থেকে মশা মারার কাজ শুরু হয়েছিল। সেপ্টেম্বর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীরা জমা জল আছে কিনা দেখেছেন। মশার লার্ভা থাকলে তা শনাক্ত করছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি আইসিডিএস কর্মীদের কাজে নামানো হয়েছে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য।
পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পুর এলাকায় থাকা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাজারখানেক মহিলাকে নিয়ে বৈঠক করে ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। তাদের কী কাজ, সেটাও বলা হয়েছে।’’
পুরসভায় এখন মোট ৩০টি স্প্রে মেশিন রয়েছে। এই বছর নতুন করে কেনা হয়েছে আধুনিক ১৭টি মশা মারা স্প্রে মেশিন। যা নিয়ে রোজ পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এক একটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে তিন দিন করে মশা মারা হচ্ছে। শুধু রাস্তায় ও নিকাশি নালাতেই নয়, বাড়ির পানীয় জলের কলের পাশে জমা জল, শৌচালয়ের পাশের জমা জলেও তেল স্প্রে করা হচ্ছে।
এখানকার একমাত্র হাসপাতালে ডেঙ্গির চিকিৎসা হয় না। রোগী ভর্তিরও ব্যবস্থা নেই। ফলে ডেঙ্গি ছড়ালে মানুষের দুর্দশার শেষ থাকত না বলেই বাসিন্দারা মনে করছেন।