কলেজে পরীক্ষার গার্ড দেওয়ার জন্য ৯টা নাগাদ বাড়ির থেকে বেরিয়েছিলেন এক কলেজ শিক্ষক। দীর্ঘক্ষণ অটোতে বসে আছেন। অটো ছাড়ছে না। ১০টা থেকে কলেজে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে অটো চালককে জোরে চালাতে বললে পাল্টা উত্তর মিলল, ‘‘না পোষালে অটো থেকে নেমে যান।’’ ওই শিক্ষক পরে বললেন, ‘‘বাস রুট চালু হলে অটো চালকদের এমন ব্যবহার কমবে। যেন ধরা কে সরা জ্ঞান করে। কিন্তু আমাদের অটোর উপরে ভরসা না করে উপায়ও তো নেই!’’ এমন অভিজ্ঞতা শুধু তাঁর নয়, ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকা তথা ক্যানিং ২ ব্লক এলাকায় নিত্যযাত্রীদের অনেকেই হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন, বাস রুট না থাকার সমস্যা কতটা তীব্র।
সমস্যার কথা মানছেন ক্যানিং ২ বিডিও অভিজিৎ সামন্তও। তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ এই এলাকায় সত্যি বড় সমস্যা। সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তথা সুন্দরবনের অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ব্লক ক্যানিং ২। রাজ্য সরকার যেখানে রাস্তাঘাট, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে নজর দিচ্ছে, সেখানে এই ব্লকের মানুষের শহরতলির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কোনও বাস রুট গড়ে ওঠেনি। ওই সব এলাকার মানুষ অটো বা ট্রেকারের উপরে নির্ভরশীল। ব্লক, থানা, স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্ক-সহ সমস্ত সরকারি, বেসরকারি অফিস জীবনতলায়। কলকাতা থেকে অনেকেই এখানে কাজে আসেন। ক্যানিং স্টেশনে নেমে অটো, ট্রেকারে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাঁদের জীবনতলায় যেতে হয়। আবার কলকাতা থেকে বাসে করে ঘটকপুকুর আসতে হয়। তারপর সেখান থেকে বাসে বা অটোতে করে বোদরা কালীতলা, সেখান থেকে অটো করে প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে জীবনতলায় আসতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জীবনতলা থেকে ঘটকপুকুর হয়ে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি বাস রুট প্রয়োজন। জীবনতলা থেকে কালীতলা হয়ে সোনারপুর পর্যন্ত একটি বাসরুট ও জীবনতলা থেকে তালদি হয়ে বারুইপুর পর্যন্ত একটি বাস রুট চালু হলে মানুষের সুবিধা হবে। সুন্দরবনের সঙ্গে ক্যানিং-মৌখালি হয়ে কলকাতা একটি বাস রুট চালু হলেও ওই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষজন।
২০১২ সালের অগস্ট মাসে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের ৭টি বাস জীবনতলা ভায়া ঘটকপুকুর হয়ে সল্টলেক ও জীবনতলা ভায়া চন্দনেশ্বর হয়ে সোনারপুর পর্যন্ত দু’টি বাস রুট চালু হয়েছিল। কিন্তু মাসখানেক পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারপর থেকে প্রশাসনিক ভাবে আর কোনও চেষ্টা করা হয়নি ওই রুট দু’টি চালু করার জন্য।
এলাকার বাসিন্দা নিজামুল হক, প্রীতম মণ্ডলরা বলেন, ‘‘দিনের বেলায় অটো, ট্রেকার পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে যাতায়াতের জন্য কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। গোটা ব্লক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাসরুট এখানে খুবই প্রয়োজন।’’
ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা জানান, এর আগে একবার জীবনতলা থেকে দু’টি রুটে বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাসরুট চালু করতে চাইলে মালিকেরা বলেছিলেন, ওই রুটে তাঁদের লোকসান হচ্ছে। সে কারণে বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ মানুষের সমস্যার কথা মাথায় রেখে জীবনতলা থেকে প্রিন্সেপঘাট পর্যন্ত একটি বাস রুট চালু করার জন্য জেলা পরিবহণ দফতরকে সম্প্রতি আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘এমন আবেদন জমা পড়েছে বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নেব।’’ ওই বাস রুটের অনুমোদন করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাসও দেন তিনি।